পাতা:জোড়াসাঁকোর ধারে.djvu/১০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জোড়াসাঁকোর ধারে
৯৩

যা-কিছু সুন্দর পাওয়া যায় এনে সাজিয়ে দিতুম একজিবিশন করে। সেসব একজিবিশনও হত এক বিরাট ব্যাপার। কাঁচের বাসন, কার্পেট, যেখানকার যা কিছু ভালো ভালো পুতুল, গয়না, ছবি, কিছু বাদ পড়ত না। সব বাছাই বাছাই জিনিস, যা-তা হলে আবার হবে না।

 একবার এমনি এক বিরাট বার্ষিক একজিবিশনের আয়োজন হচ্ছে। উড্‌রফ বললেন, ‘এবারে ভারতবর্ষের সব জায়গার জিনিস জোগাড় করতে হবে।’ তিন মাস আগে থেকে জায়গায় জায়গায় চিঠি লিখে দেওয়া হল; কোথাও আমাদের লোক গেল জিনিস সংগ্রহ করতে; কোথাও বা টাকা পাঠানো হল, পার্সেল করে যেসব জিনিস আসবে তার খরচ বাবদ। কিছুদিন বাদেই নানা জায়গা থেকে ছোট বড় হালকা ভারি প্যাকিং বাক্স আসতে লাগল, সে কি উৎসাহ আমাদের বাক্স খোলার। আমাদের চতুর্দিকে সাজানো প্যাকিং বাক্স ঠাসা, একটা-একটা করে খোলা হচ্ছে। দিল্লি থেকে এসেছে সুন্দর সুন্দর পটারি; কাশ্মীর থেকে নানারকম শাল, হাতের কাজ, তার মধ্যে একটা পুরানো পেপারম্যাসের উপর কাজ করা দোয়াতদানি ছিল বড় সুন্দর, এখনো মনে পড়ে, বড় বড় কার্পেট; কেষ্টনগরের পুতুল; বোম্বে থেকে ভীষণ সব ছবি; লক্ষ্ণৌর তাস, বাদশা-বেগমের মিনিয়েচার আঁকা, বেগম-বাদশারা খেলত; উড়িষ্যার পট; আর গঞ্জাম থেকে এল তিনটি হাতির দাঁতের মূর্তি—একটি কূৰ্ম অবতার, একটি রাধাকৃষ্ণের বিহার, সবাইকে দেখাবার মত নয়, কিন্তু কি চমৎকার মূর্তি, পাকা হাতের কাজ—উড্‌রফ দেখেই বললেন, ‘এই রকম আমার একটি চাই। তুমি যে করেই হোক আমায় এই মূর্তিটি করিয়ে দাও, যত টাকা লাগে ভাবনা নেই।’ ডেকে পাঠালুম আচারী মাস্টারকে, চমৎকার কাঠের কাজ করত সে। তাকে বললুম, ‘ভালো চন্দনকাঠে তুমি এর দুটি নকল করে দাও।’ সে কয়েকদিনের মধ্যেই দুটি মূর্তি কেটে নিয়ে এল, ঠিক হুবহু সেই মূর্তিটি কপি করে ছেড়ে দিয়েছে। তার একটি উড্‌রফকে দিলুম, একটি আমি নিলুম। আর একটি মূর্তি, সেটি কৃষ্ণের। আধহাতমত উঁচু মূর্তিটি, বাঁশিটি ধরে আছেন মুখের কাছে; সে কি ভাব, কি ভঙ্গি, কি বলব তোমায়, মূর্তিটি দেখে আমি অবাক। অদ্ভুত মূর্তি, আইভরির রঙটি পুরানো হয়ে দেখাচ্ছে যেন পাকা সোনা। সেই মূর্তিটি দেখেই কেন জানি না আমার মনে হল, এর নিশ্চয়ই জুড়ি আছে। এমন সুন্দর কৃষ্ণের রাধা না থেকে পারে কখনো? নিশ্চয়ই এই যুগলমূর্তির পূজো হত এককালে। সেই জোড়ভাঙা