পাতা:জোড়াসাঁকোর ধারে.djvu/১২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৬
জোড়াসাঁকোর ধারে

দিয়েছে। তপসে নয়, সব ভোলামাছ দিয়ে দিয়েছিল, ভোলামাছ দিয়ে ভুলিয়ে ঠকিয়ে দিলে।’ আমরা সব হেসে বাঁচিনে। সেই রাখালি বলত, ‘অবনদাদা, তুমি যা করলে, দিল্লিতে মেডেল পেলে, খেতাব পেলে, ছবি এঁকে হিস্ট্রিতে তোমার নাম উঠে গেল।’ এতেই ভায়া আমার খুশি। আমাদের স্টীমারযাত্রীদের সেই দলটির নাম দিয়েছিলুম গঙ্গাযাত্রী ক্লাব। এই গঙ্গাযাত্রী ক্লাবের জন্য স্টীমার কোম্পানির আয় পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছিল। দস্তুরমত একটি বিরাট আড্ডা হয়ে উঠেছিল। একবার ডারবির লটারির টিকিট কেনা হল ক্লাবের নামে। সকলে এক টাকা করে চাঁদা দিলুম। টাকা পেলে ক্লাবের সবাই সমান ভাগে ভাগ করে নেব। বৈকুণ্ঠবাবু প্রবীণ ব্যক্তি, তাকেই দেওয়া হল টাকাটা তুলে। তিনি ঠিকমত টিকিট কিনে যা যা করবার সব ব্যবস্থা করলেন। ওদিকে রোজই একবার করে সবাই জিজ্ঞেস করি, ‘বৈকুণ্ঠবাবু, টিকিট কিনেছেন তো ঠিক?’ তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, সব ঠিক আছে, ভেবো না। টাকাটা পেলে ঠিকমতই ভাগাভাগি হবে।’ তা তো হবে, কিন্তু মুখে মুখে কথা সব, লেখাপড়া তো হয়নি কিছুই। অবিনাশকে বললুম, ‘অবিনাশ, এই তো ব্যাপার, কি হবে বল তো?’ অবিনাশ ছিল ঠোঁটকাটা লোক, পরদিন বৈকুণ্ঠবাবু স্টীমারে আসতেই সে চেপে ধরলে, ‘বৈকুণ্ঠবাবু, আপনাকে উইল করতে হবে।’ ‘উইল? সে কি, কেন?’ ‘কেন নয়, আপনাকে করতেই হবে।’ বৈকুণ্ঠবাবু দারুণ ঘাবড়ে গেলেন—বুঝতে পারছেন না কিসের উইল। অবিনাশ বললে, ‘টাকাটা পেলে শেষে যদি আপনি আমাদের না দেন বা মরে-টরে যান, টিকিট তো আপনার কাছে। তখন কি হবে? আজই আপনাকে উইল করতে হবে।’ বৈকুণ্ঠবাবু হেসে বললেন, ‘এই কথা? তা বেশ তো, কাগজ কলম আনো।’ তখনি কাগজ কলম জোগাড় করে বসল সবাই গোল হয়ে। কি ভাবে লেখা যায়, উকিল চাই যে উকিল ছিলেন একজন সেখানে—তিনিও গঙ্গাযাত্রী ক্লাবের মেম্বার, ডিসপেপসিয়ায় ভুগে ভুগে কঙ্কালসার দেহ হয়েছে তাঁর। তাঁকেই চেপে ধরা গেল, তিনি মুসাবিদা করলেন—উইল তৈরি হল, গঙ্গাযাত্রী ক্লাবের টিকিটে যে টাকা পাওয়া যাবে তা নিম্নলিখিত ব্যক্তিগণ সমান ভাগে পাবে ও আমার অবর্তমানে আমার ভাগ আমার সহধর্মিণী শ্রীমতী অমুক পাবেন ব’লে নিচে বৈকুণ্ঠবাবু নাম সই করলেন। উইল তৈরি। কিছুদিন বাদে ডারবির খেলা শুরু হল। রোজই কাগজ দেখি আর বলি, ‘ও বৈকুণ্ঠবাবু, ঘোড়া উঠল?’ জানি যে কিছুই হবে না তবু রোজই সকলের ওই এক প্রশ্ন। একদিন এইরকম ‘ও বৈকুণ্ঠবাবু, ঘোড়া উঠল’ প্রশ্ন করতেই