পাতা:জোড়াসাঁকোর ধারে.djvu/১৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২৪
জোড়াসাঁকোর ধারে

 আবার হবি তো হ সেই সময়ে আমার ভগ্নীপতি শেষেন্দ্র, প্রতিমার বাবা, একখানা পার্শিয়ান ছবির বই দিল্লির, আমাকে বকশিশ দিলেন। রবিকাকাও আবার সে সময়ে রবিবর্মার ছবির কতকগুলি ফোটো আমাকে দিলেন। তখন রবিবর্মার ছবিই ছিল কিনা ভারতীয় চিত্রের আদর্শ। যাই হোক তখন সেই আইরিশ মেলডির ছবি ও দিল্লির ইন্দ্রসভার নকশা যেন আমার চোখ খুলে দিলে। একদিকে আমার পুরাতন ইউরোপীয়ান আর্টের নিদর্শন ও আর একদিকে এদেশের পুরাতন চিত্রের নিদর্শন। দুই দিকের দুই পুরাতন চিত্রকলার গোড়াকার কথা একই। সে যে আমার কি আনন্দ, সেই সময়ে সাধনাতে আমার ওই ইন্দ্রসভার বইখানির বর্ণনা দিয়ে ‘দিল্লির চিত্রশালিকা’ ব’লে বলেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রবন্ধ লিখেছিলেন; চারদিকে তখন একটা সাড়া পড়ে গিয়েছিল।

 যাক, ভারতশিল্পের তো একটা উদ্দিশ পেলুম। এখন শুরু করা যাবে কি করে কাজ? তখন একতলার বড় ঘরটাতে একধারে চলেছে বিলিয়ার্ড খেলার হো হো, একধারে আমি বসেছি রং তুলি নিয়ে আঁকতে। দেশের শিল্পের রাস্তা তো পেয়ে গেছি, এখন আঁকব কি? রবিকাকা আমায় বললেন, বৈষ্ণব পদাবলী পড়ে ছবি আঁকতে। রবিকাকা আমাকে এই পর্যন্ত বাতলে দিলেন যে চণ্ডীদাস বিদ্যাপতির কবিতাকে রূপ দিতে হবে। লেগে গেলুম পদাবলী পড়তে। প্রথম ছবি করি ভারতীয় পদ্ধতিতে চণ্ডীদাসের দু-লাইন কবিতা—

পৌখলী রজনী পবন বহে মন্দ
চৌদিকে হিমকর, হিম করে ফন্দ।

এ ছবিটা এখনো আমার কাছেই বাক্সবন্ধ। সেই আমার প্রথম দেশী ধরনের ছবি ‘শুক্লাভিসার’। কিন্তু দেশী রাধিকা হল না, সে হল যেন মেমসাহেবকে শাড়ি পরিয়ে শীতের রাত্তিরে ছেড়ে দিয়েছি। বড় মুষড়ে গেলুম—নাঃ, ও হবে না, দেশী টেকনিক শিখতে হবে। তখন তারই দিকে ঝোঁক দিলুম। ছবিতে সোনাও লাগাতে হবে। তখনকার দিনে রাজেন্দ্র মল্লিকের বাড়িতে এক মিস্ত্রি ফ্রেমের কাজ করে। লোকটির নাম পবন, আমার নাম অবন। তাকে ডেকে বললুম, ‘ওহে সাঙাত, পবনে অবনে মিলে গেছে, শিখিয়ে দাও এবারে সোনা লাগায় কি করে।’ সে বললে, ‘সে কি বাবু, আপনি ও কাজ শিখে কি করবেন? আমাকে বলবেন আমি করে দেব।’ ‘না হে, আমার ছবিতে সোনা লাগাব; আমাকে শিখিয়ে দাও।’ শিখলাম তার কাছে কি