পাতা:জোড়াসাঁকোর ধারে.djvu/১৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫০
জোড়াসাঁকোর ধারে

 আস্তে আস্তে এল আশেপাশের সঙ্গে যোগাযোগ। বুনো ছাগল, খেলতে চাই তার সঙ্গে, সে চোখ রাঙিয়ে শিঙ বাগিয়ে তেড়ে আসে, অথচ মনকে টানে।

 ফুলের ডাল দেখে মন চায় চড়ুইপাখি হয়ে তাতে ঝুলতে।

 হাঁস উড়ে আসছে, এবারে মন আরো খানিকটা এগিয়ে গিয়ে জানতে চায়। যেন মেঘদূতের যক্ষের মত পড়ে আছে একজন; সুদূরের আকাশ হতে সংবাদ নিয়ে এসে সামনে দিয়ে উড়ে গেল হাঁস।

 এইকালে কল্পনা এল। গোল চাঁদ বেরিয়ে আসছে বনের ভিতর থেকে। মেঘ তাকে ঢেকে দিচ্ছে বারে বারে। ঘন বনে অদ্ভুত এক পাথি ডাকতে ডাকতে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

 তার পর কত রকম সংগ্রহ, নানা ঘাটে ভিড়তে ভিড়তে চলেছে। কোথাও ফুল, কোথাও ছেলেমেয়ে কোথাও গাছ, কত কি! ঘাটে ঘাটে ঠেকেছে আর সংগ্রহ করেছে। বড় শৌখিন কাল সেটা। সে হচ্ছে রোমান্সের যুগ। স্ফূর্তি ক’রে, খেলায় মেতে, সময় কাটিয়ে শখের জিনিস সব সংগ্রহ করলে।

 তার পর সংসার যেমনি চোখ রাঙালে, মহাকালের রক্তচক্ষু বললে, ‘কোথায় চলেছিস আনন্দে বয়ে? থাম্ এবারে।’ সেই মহাকালের ধমক খেয়ে মন চমকে উঠল। তখন আর খেলা-খেলনাতে মন বসে না। পুরোনো খেলনার বোঝা পিঠে বয়ে আর-এক ঘাটে চলল। ধমক খেয়ে এখন কোথায় যায়, কি করে, কি খেলে, এই ভাবনা।

 জীবনতরু জল না পেলে বাঁচে না। পাথরের থেকেও রস নিতে চায়, যে পাষণের মঞ্চে সে বাঁধা থাকে তা থেকে।

 তখন কে এল? তখন প্রভু এলেন তাকে বাঁচাবার জন্যে। বললেন, ‘সেই দিকে শিকড় পাঠা যেখান থেকে সে চিরদিন রস পাবে, বনবাসের আনন্দ পাবে।’

 জোড়াগাছের স্মৃতি ঝাপসা হয়ে গেছে, ক্রমেই মিলিয়ে যাচ্ছে। অন্য গাছটিতে পড়েছে অস্তরবির আলে, তাপ দিয়ে বাঁচাতে চাচ্ছে। সবুজ মরে গিয়ে গৈরিক রঙের শোভা প্রকাশ পেল। সেখানে শুরু হল বনের ইতিহাস। অন্ধকার রাত্রে আর-এক সুর বাজল মনে। বনদেবীদের দেওয়া সেই স্বর।

 সোনার স্বপ্ন যেন আর-একবার ধরা দেবে দেবে করলে, যেখানে সোনার হরিণ থাকে।

 অলকার রঙছুট ময়ূরী এল। সে-জগতে সে রঙের অপেক্ষ রাখে না। সেই