পাতা:জোড়াসাঁকোর ধারে.djvu/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৬
জোড়াসাঁকোর ধারে

খেলনা; সে-সব তাঁর শখের খেলনা, কাউকে ধরতে ছুঁতে দেন না। অনেক ক’রে বললে কখনও একটা-দুটো খেলনা বের করে নিজের হাতে দম দিয়ে চালিয়ে দেন মেঝেতে; আবার তুলে রাখেন। সেই বড়মার ঘরে যেতে হত একটি মেটে ঘোরানো সিঁড়ি বেয়ে। বরাবর তেতলার চিলে-ছাদ অবধি উঠে গেছে সেই গোল সিঁড়ি। তারই মাঝামাঝি এক জায়গায় মাটির একটি হাতদেড়েক কেষ্টমূর্তি, তাকের উপর ধরা। আমার লোভ সেই মাটির কেষ্টটির উপর। একদিন দুপুরে সেই সিঁড়ি বেয়ে উঠে বড়মার কাছে দরবার করলুম, “আমাকে মাটির কেষ্টটি দেবে? বড়মা খানিক ভেবে বললেন, ‘চাস? তা নিয়ে যা। ভাঙিসনে।’ বুড়ী দাসী তাক থেকে কেষ্টটি পেড়ে আমার হাতে দিলে। আমি সেটি বগলদাবা করে তরতর করে নিচে নেমে এলুম। দাদাদেরও নজর ছিল মূর্তিটির উপর, কেউ পাননি। তাদের দেখালুম। ‘দেখো, তোমরা তো পেলে না; আমি কেমন পেয়ে গেছি।’ দাদারা বললেন, ‘হুঃ, ওর ভিতরে কি আছে জানিসনে তো? এই টেবিলটির উপরে চড়ে মূর্তিটি ফেলে দে নিচে, দেখবি, আশ্চর্য জিনিস বের হবে এর ভিতর থেকে।’ দাদাদের অবিশ্বাস করতে পারলেম না। মূর্তির ভিতরের ‘আশ্চর্য’ দেখবার লোভে তাড়াতাড়ি উঁচু টেবিলটায় উঠে দিলেম কেষ্টকে মাটিতে এক আছাড়। ‘আশ্চর্য’ তো দেখা দিল না; মাটির পুতুল ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়ল ঘরময়। তথন আমার কান্না, দাদার হো-হো করে হেসে হাততালি দিয়ে চম্পট।

 সেই ভিতর দেখার কৌতুহল আজও আমার ঘুচল না। ছবি, তার ভিতরে কি আছে খুঁজি। নোড়ানুড়িতে খুঁজি, কাঠকুট্‌রোতে খুঁজি। নিজের আর অন্যের মনের ভিতরে খুঁজি, কি আছে না-আছে। খুজি, কিছু পাই না-পাই, এই রকম খোঁজাতেই মজা পাই। হাত আমার তখন ভালো করে পেনসিল ধরতে পারে না, ছবি আঁকা কাকে বলে জানিনে; কিন্তু ছবি দেখতে ভাবতে শিখি সেই পিসিমার ঘরে বসে।

 মার ঘরে আমরা ঢুকতে পাইনে। মার ঘর একেবারে আলাদা ধরনে সাজানো। মার শোবার ঘর তৈরি হচ্ছে। রাজমিস্ত্রি লেগে গেছে; বাবামশায়ের পছন্দমতো মেঝেতে নানা রঙের টালি পাথর বসানো হচ্ছে, আস্তে আস্তে যাই সেখানে। ঠুকঠাক, মিস্ত্রিরা নকশা মিলিয়ে পাথর বসায়; অবাক হয়ে দেখি। কখনো বা দু-একটা পাথর চেয়ে আনি। দেখতে দেখতে একদিন ঘর তৈরি হয়ে গেল। বাবামশায় নিজের হাতে সে ঘর সাজালেন। চমৎকার সব পালিশ-করা দামী