পাতা:জোড়াসাঁকোর ধারে.djvu/৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
জোড়াসাঁকোর ধারে
৫৭

এবারে—হালকা হতে পারলে আমিও যে বাঁচি। হ্যাঁ, সেই সিল্কের রুমাল গিব্রেল সাহেবই এনে দিত। আর ছিল বরাদ্দ সকলের ছোট ছোট এক-এক শিশি আতর।

 কতরকম লোক আসত, কত রকম কাণ্ড হত ওই বারান্দায়। একবার মাইক্রসকোপ এসেছে বিলেত থেকে, প্যাকিং বাক্স খোলা হচ্ছে। কি ঘাস দিয়ে যেন তারা প্যাক করে দিয়েছে, বাক্স খোলা মাত্র বারান্দা সুগন্ধে ভরপুর। ‘কি ঘাস, কি ঘাস’, বলে মুঠো মুঠো ঘাস ওখানে যারা ছিলেন সবাই পকেটে পুরলেন, বাড়ির ভিতরেও গেল কিছু, মেয়েদের মাথা ঘষার মসলা হবে। মাইক্রসকোপ রইল পড়ে, ঘাস নিয়েই মাতামাতি, দেখতে দেখতে সব ঘাস গেল উড়ে। আমিও এক ফাঁকে একটু নিলুম, বহুদিন অবধি পকেটে থাকত হাতের মুঠোয় নিয়ে গন্ধ শুঁকতুম।

 তার পর আর একবার এল ওই বারান্দায় এক রাক্ষস, কাঁচা মাংস খাবে। সকাল থেকে যদু মাস্টার ব্যস্ত, আমাদের ছুটি দিয়ে দিলেন রাক্ষস দেখতে। ‘দেখবি আয়, দেখবি আয়, রাক্ষস এসেছে’ বলে ছেলের দল গিয়ে জুটলুম সেখানে। মা পিসিমারাও দেখছেন আড়ালে থেকে খড়খড়ির ফাঁক দিয়ে। ছেলে বুড়ো সবাই সমান কৌতুহলী। রাবণের গল্প পড়েছি, সেই দেশেরই রাক্ষস, কৌতুহল হচ্ছে দেখতে, আবার ভয়-ভয়ও করছে। ‘এসেছে, এসেছে, আসছে, আসছে’ রব পড়ে গেল। বাবামশায়ের পোষা খরগোস চরে বেড়াচ্ছে বারান্দায়—কেদারদা চেঁচিয়ে উঠলেন, খরগোসগুলিকে নিয়ে যা এখান থেকে, রাক্ষস খেয়ে ফেলবে।’ শুনে আমরা আরো ভীত হচ্ছি, না জানি কি। খানিক পরে রাক্ষস এলো, মানুষ—বিশ্বেশ্বরের মতই দেখতে রোগাপটকা অতি ভালোমানুষ চেহারা—দেখে আমি একেবারে হতাশ। চাকররা একটা বড় গয়েশ্বরী থালাতে গোটা একটা পাঁঠা কেটে টুকরো টুকরো করে নিয়ে এল রান্নাঘর থেকে। সেই মাংসের নৈবেদ্য সামনে দিতেই খানিকটা নুন মেখে লোকটা হাপ্‌ হাপ্‌ করে সব মাংস খেয়ে টাকা নিয়ে চলে গেল। সেই এক রাক্ষস দেখেছিলেম ছেলেবেলায়, কাঁচাখোর।

 সেকালের লোকদের ছোট বড় সবারই এক-একটা চরিত্র থাকত। অক্ষয়বাবু আসতেন ফিটফাট বাবুটি সেজে। তার কথা তো অনেক বলেছি আগের সব গল্পে। সে সময়ে ফ্যাশান বেরিয়েছে বুকে মড়মড়ে পেলেট দেওয়া চোস্ত ইস্তিরি করা শার্ট, তাই গায়ে দিয়ে এসেছেন অক্ষয়বাবু। কালো রঙ ছিল তার,