পাতা:জোড়াসাঁকোর ধারে.djvu/৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
জোড়াসাঁকোর ধারে
৬৭

কই?’ ধুলো উড়োনো চাই। সেবারে এখানেই এই চেয়ারে এমনিভাবেই বসে বাস দেখতুম, রাস্তার পরে ওই গাছটির উপর দিয়ে লাল ধুলো উড়ে এল, দেখতে দেখতে গাছটি ঢেকে গেল, আবার ধীরে ধীরে গাছটি পরিষ্কার হয়ে ফুটে বের হল, ধুলোর হাওয়া চলে গেল আরো এগিয়ে, মনে হল গাছটির উপরে যেন একপশলা লাল ধুলোর বৃষ্টি হয়ে গেল। সে কি চমৎকার। তা কি আঁকতে পারি? পারিনে। কিন্তু আঁকতে হবে যদি সময় থাকে, এই বৃদ্ধকালেও দেখো মন সঞ্চয় করে রাখছে, কোন্‌ জন্মের জন্য বলতে পারো?

 একবার কি হল, আমার চোখের চশমার একটা কাঁচের কোণা ভেঙে গেল। তাই চোখে দিয়ে থাকি। বললুম, আরো ভালোই হয়েছে শার্শি ফাঁক হয়ে গেছে, ওর ভিতর দিয়ে রং আসবে। একদিন নন্দলালকে বললুম, দেখো তো আমার এই চশমাটি চোখে দিয়ে। নন্দলাল তা চোখে দিয়ে বললে, এ যে রামধনুকের রং দেখা যায়; অনেকদিন বুঝি পরিষ্কার করেননি কাঁচ। আমি বললুম, না ন, তা নয়। ছবিতে যত রঙ দিই সেই রঙই এই রাস্তায় লেগেছে।

আমার হৃদয় তোমার আপন হাতে দোলে দোলাও
দোলাও দোলাও।

 মায়ের দোল স্মরণ হয়। যাবার সময় তো হইছে, যাবই তো, এ ঘাটের ধাপ শেষ হয়ে এসেছে। নদীর ওপরে গিয়ে কি দেখব? আবার কি মিলব সবাই সেখানে? কি জানি। তা যদি জানতে পারা যেত তবে কিন্তু পৃথিবীতে বেঁচে থাকার রস চলে যেত। এইখানেই সব শেষ করে নাও; এখানকার পাত্র এইখানেই ধুয়ে ফেলো। শেষ পেয়ালার ফোঁটা ফোঁটা তলানিটুকু, সেখানেই সব রস জমা হয়ে আছে। যত শেষের দিকে যাবে তত রস। চীনেরা বেশ উপমা দেয় তাদের চায়ের সঙ্গে, বলে, চা তিন রকম। প্রথম জ্বালের চা ঢাললে, ছোট ছেলেরা খাবে, পাতলা চা, সোনার বর্ণ, তাতে একটু দুধ একটু চিনি। দ্বিতীয় জ্বাল, তখনো সেটা ফুটছে রং আগের চেয়ে একটু ঘন হয়ে এসেছে, তা প্রৌঢ়দের জন্য। আর তৃতীয় জ্বাল, তলায় যে চা রয়েছে অল্প জল আর চায়ের ক্বাথ, এই যে শেষ পেয়ালা, এ সবার জন্য নয়। যাদের বয়েস হয়েছে, সুখ-দুঃখ তিক্ত মিষ্টের রস সত্যি উপভোগ করতে পারে এ শুধু তাদের জন্যই।

কালি কলম মন
লেখে তিনজন।

 ছবিটি আঁকি তুলিটি জলে ডোবাই, রঙে ডোবাই, মনে ডোবাই, তবে লিখি