বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:জোড়াসাঁকোর ধারে.djvu/৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
জোড়াসাঁকোর ধারে
৭৫

তার নাম। সবাইকে কুস্তিতে হারিয়ে দেয়, কেউ পারে না তার কাছেই এগতে। একবার তার শখ গেল গুরুর সঙ্গে কুস্তি করে গুরুকে হারিয়ে নাম কিনতে। রাজা শুনে আয়োজন করবার হুকুম দিলেন। পাড়ায় পাড়ায় ঢোল পিটিয়ে দিলেন দিগ্বিজয়ী কুস্তিগির এবারে গুরুর সঙ্গে কুস্তি লড়বে। দিন ঠিক হল। লোকে লোকারণ্য দুজনের কুস্তি দেখতে। বুড়ো পালোয়ানকে রাজা হুকুম করলেন। সে বলে, ‘হুজুর, বুড়া হো গিয়া, তাকদ নেহি, মর্‌ জায়েগা। ও ছোকরা হ্যায়।’ কিন্তু রাজার হুকুম, ‘না’ বলবার উপায় নেই। ওদিকে দিগ্বিজয়ী ছাত্র সভায় ঢুকে পাঁয়তারা করছে, ভাবটা বুড়োকে হারাতে আর কতক্ষণ। বুড়ো কি করে! সেলাম ঠুকে লেংটিটা টেনে প’রে মাটি থেকে একটু ধুলো হাতে মেখে সভায় ঢুকল। কুস্তি আরম্ভ হল। প্রথম কয়েক প্যাঁচ বুড়ো হারলে, দিগ্বিজয়ী সাকরেদ সহজেই তাকে ফেলে দেয়। সবাই ভাবলে বুড়ো হারে বুঝি এইবারে। শেষবার সাকরেদ প্যাঁচ দিতে যেমন এসেছে এগিয়ে, বুড়ো এমন এক প্যাঁচ মারলে চোখের নিমেষে সাকরেদ ছিটকে পড়ে গেল অনেকটা দূরে বার কয়েক ডিগবাজি খেয়ে। সভাসুদ্ধ হৈ হৈ। ওস্তাদ সাকরেদের দিকে চেয়ে বললে, ‘হুয়া?’ সাকরেদ উঠে হাত জোড় করে বললে, ‘ওস্তাদজি, এ প্যাঁচ তে আপ শিখলায়া নেহি।’ বুড়ো বললে, ‘নেহি বেটা, আজকে ওয়াস্তে এ প্যাঁচ রাখ্‌খা থা।’ জানত সাকরেদের শখ হবে একদিন কুস্তি লড়তে; সেইদিনের জন্য ওস্তাদ এই প্যাঁচ রেখে দিয়েছিল।

 আমার বেলাও হয়েছিল তাই। ঠিক এই কথাই বলেছিল আমায় আমারই এক নামজাদা ছাত্র। আর্ট সোসাইটিতে আমার সেই পাখির সেটগুলি একজিবিট করেছি, সে দেখে বললে, ‘এ কায়দা তো শেখাননি আমাদের।’ বললুম, ‘সবই শিখিয়ে দেব নাকি?’ অনেক প্যাঁচ এখনো শিখি, রেখে দিই, তোমরা লড়তে এলে তখন শেখাব।


১০

রবিকা বলতেন, ‘অবন একটা পাগলা।’ সে কথা সত্যি। আমিও এক-একসময়ে ভাবি, কি জানি কোন্‌দিন হয়তো সত্যিই ক্ষেপে যাব। এতদিনে হয়তো পাগলই হয়ে যেতুম, কেবল এই পুতুল আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। এই নিয়েই কোনোরকমে ভুলে থাকি। নয় তো কি দশাই হত আমার এতদিনে।