পাতা:জোড়াসাঁকোর ধারে.djvu/৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯০
জোড়াসাঁকোর ধারে

 থর্নটনের মত অমন বন্ধ হয়নি আর আমার। তাঁরই চাপরাসিকে দিয়েছিলেন আমার কাছে ছবি আঁকা শিখতে। বলিনি সে গল্প বুঝি? একবার সাহেব যাবেন দেশে, চাপরাসিকে দিয়ে গেলেন আমার কাছে। বললেন, ‘এর ছবি আঁকার হাত আছে, একে তুমি ছবি আঁকা শেখাও; খরচপত্তর যা লাগে তা আমি দেব। সাহেব চলে গেলেন দেশে; পরদিন চাপরাশি এল আমার আর্ট স্কুলে। সাহেবেরই একটা লাল নীল পেনসিল দিয়ে ট্রামগাড়ি, কলকাতার রাস্তা, এই সব আঁকত অবসর সময়ে। বসিয়ে দিলুম তাকে নন্দলালের সঙ্গে। তাদের বললুম, ‘এও একজন ছাত্র, একে যেন অবজ্ঞা কোরো না। এখানে সবার আসন সমান।’ চাপরাসি দাঁড়িয়ে আছে একপাশে; বললুম, ‘বোস তুই এখানে এই বেঞ্চিতে।’ সে কেবলি কাঁচুমাঁচু করে; কিছুতেই বসতে চায় না। তাকে ভালো ভাবে বসাতেই আমার লাগল বেশ কিছুদিন। রোজই সে আসে, ছবি আঁকে। কি আর তেমন আঁকবে এই কয়দিনে, তবু হাত তার ধীরে ধীরে বেশ পাকা হয়ে আসছিল। সাহেব দেশ থেকে ফিরে এলেন, চাপরাসি আবার তার কাজে যোগ দিলে। একদিন সাহেব এসে বললেন ‘তুমি আমার চাপরাসির করেছ কি? ছবি আঁকার কথা ছেড়ে দাও, লোকটা একেবারে বদলে গেছে। তার শিষ্টতা আচারব্যবহার কথাবার্তা আমাকে মুগ্ধ করছে। আগের সেই চাপরাসি আর নেই, তুমি আগাগোড়া লোকটাকে এমন করে বদলে দিলে কি করে?’ বললুম, ‘আর কিছু নয়, আমি শুধু ওকে বসতে শিখিয়েছিলুম।’

 সে সময়ে বাংলাদেশের যত জমিদার মিলে একটা সোসাইটি হয়, নাম ল্যাণ্ডহোল্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন। সিংহ মশায় সভাপতি। উড্‌রফ আর ব্লাণ্টও জুটল সে সময়ে। সুরেন কোমর বেঁধে কাজ করে তাতে। সুরেনের মাথায়ই খেলল প্রথমে একটা ছবির একজিবিশন করতে হবে। আমার যা কখানা ছবি ছিল, ওকাকুরা এনেছিলেন সঙ্গে কিছু জাপানী প্রিণ্ট, আর এখান-ওখান থেকে কুড়িয়ে বাড়িয়ে জোগাড় করলে আরও কখানা ছবি। তাই নিয়ে সে তৈরি একটা মস্ত বাড়ি ছিল ল্যাণ্ডহোল্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের; নিচের তলায় বিলিয়ার্ড রুম, পড়বার ঘর, উপরে ব্যবস্থা আছে কোন সভ্য দূর থেকে এলে থাকতে পারে সেখানে, সুরেন চাইলে সেই বিলিয়ার্ড-রুমেই একজিবিশন হবে। সিংহ মশায় বললেন, ‘ছবির আমি বুঝিনে কিছুই; তবে চাইছ ঘর একজিবিশন সাজাতে, তা নাও।’ সেই বিলিয়ার্ড-রুমেই ছবি সব সাজানো হল। বেশ লোকজন আসত দেখতে; আমাদেরও ভাল লাগত, ইচ্ছে ছিল আরো কয়েকদিন চলে