পাতা:ঝাঁশির রাণী - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬
ঝাঁশির রাণী ।

পর তিন ঘটিকা পর্যন্ত এক হাজার এক শত রামনাম কাগজে লিখিয়া মৎস্যদিগের নিকট নিক্ষেপ করিতেন। সায়ংকাল হইতে রাত্রি আট ঘটিকা পর্যন্ত পুরাণ শ্রবণ করিতেন এবং কেহ দেখা করিতে আসিলে দেখা করিতেন। পুরাণ-পাঠ শ্রবণান্তে পুনর্ব্বার স্নান করিয়া দেবপূজা করিতেন; প্রতি শুক্রবার উপবাস করিতেন ও সূর্যাস্তকালে শ্রীমহালক্ষ্মী দেবীর দর্শনে নির্গত হইতেন।

 ঋঁশি খাস করিয়া লইবার পর, রাজ্যের পুরাতন দরবারী লোক- দিগকে অবসর দেওয়া হয়, এই জন্য রাণী ঠাকুরাণীর পিতা মোরোপন্ত ও লক্ষ্মণ-রাও কেবল এই দুই ব্যক্তি রাণী ঠাকুরাণীর কাজকর্ম তত্ত্বাবধান করিতে আসিতেন। এক্ষণে রাজবাটার সমস্ত বৈভব-মহিমা তিরোহিত হইয়া, রাণী ঠাকুরাণীর দৈন্যদশা ক্রমশঃই বৃদ্ধি হইতে লাগিল। এই সময়ে আর একটা ঘটনা হওয়ায় তাঁহার মর্মান্তিক কষ্ট উপস্থিত হইল। দত্তকপুত্র দামোদর-রাওর প্রতি রাণী ঠাকুরাণীর প্রগাঢ় প্রীতি ছিল। দামোদর- রাও সপ্তম বর্ষে পদার্পণ করিলেন, তাহার উপনয়নের প্রস্তাব হইল। কিন্তু এই সময়ে তাহার নিকট যথেষ্ট অর্থ না থাকায়, দামোদর-রাওর নামে যে টাকা জমা ছিল তাহা হইতে এক লক্ষ টাকা অনুষ্ঠানের ব্যয় নির্বাহার্থ কমিসনরের নিকট প্রার্থনা করিলেন। কমিসনর সাহেব তাহার বরিষ্ঠ পদবীর কর্তৃপক্ষকে এই বিষয়ে জানাইলেন। সেইখান হইতে এই উত্তর আসিল, চারি জন সুপ্রতিষ্ট লোকের জামানতিতে যদি এইরূপ লিখিয়া দেওয়া হয় যে, বালক বয়ঃপ্রাপ্ত হইয়া যখন এই টাকা দাবী করিবে। তখনই এই টাকা সরকারী তহবিলে পূরণ করিয়া দেওয়া হইবে, তাহা হইলে এই টাকা দেওয়া যাইতে পারে। এই কথা-অনুসারে রাণী ঠাকুরাণী ৪ জন সুপ্রতিষ্ট ব্যক্তিকে জামিন দিয়া একলক্ষ টাকা লইয়া দামোদর-রাওর উপনয়ন অনুষ্ঠান সমাধা করিলেন।

 এইরূপে কায়ক্লেশে ও মনঃকষ্টে রাণীর জীবন অতিবাহিত হইতেছিল