পাতা:ঝাঁশির রাণী - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঝঁশির রাণী।
২৩

বিশ্বস্তসূত্রে অবগত হইয়াছি, হত্যাকাণ্ডের সময় রাণীর কোন ভৃত্যই উপস্থিত ছিল না। ইহা প্রধানতঃ আমাদের নিজের অনুচরবর্গেরই কাণ্ড বলিয়া বোধ হয়। অনিয়মিত দলের অশ্বারোহী সিপাহীরাই এই রক্তময় ভীষণ আদেশ প্রচার করে এবং দারোগাই এই হত্যাকাণ্ডের প্রধান সর্দার।”

 সে যাহাই হউক, ধারাবাহিক ঘটনার সূত্রটা আবার ধরা যাউক। ঝঁশির বিদ্রোহীরা য়ুরোপীয়দিগকে নিহত করিয়া রাজবাটার অভিমুখে যাত্রা করিল এবং রাণীঠাকুরাণীকে এই কথা বলিয়া পাঠাইলঃ—আমাদিগের দিল্লি যাইতে হইবে, ইহার দরুণ তিন লক্ষ টাকা আবশ্যক। এই টাকা যদি আপনি না দেন, তাহা হইলে আপনার রাজবাটী তোপের দ্বারা এখনই উড়াইয়া দিব। রাণীর পিতা মৌরপন্ত ও দেওয়ান লক্ষ্মণ-রাও, রাণীর নিকট আসিলেন এবং এই সঙ্কট হইতে মুক্তিলাভের উপায় জিজ্ঞাসা করিলেন। রাণী অবলা স্ত্রীলোক হইলেও তাহার অপরিসীম সাহস ও উপস্থিতবুদ্ধি ছিল। তিনি কিংকর্তব্যবিমূঢ় না হইয়া রাজ্যরক্ষণের ব্যবস্থা করিতে কৃতসঙ্কল্প হইলেন এবং বিদ্রোহের নেতাদিগের নিকট এইরূপ বলিয়া পাঠাইলেন; “আমার সমস্ত রাজ্য ইংরাজ-সরকার খাস করিয়া লওয়ায় আমি অর্থহীন হইয়াছি—এক্ষণে আমার নিতান্ত দৈন্যদশা উপস্থিত। এই সময়ে আমার ন্যায় গরিব অবলাকে কষ্ট দেওয়া তোমাদের উচিত নহে।” বিদ্রোহীরা ইহার প্রত্যুত্তরে এইরূপ বলিয়া পাঠাইল; “তোমার নিকট হইতে যদি খর্চার হিসাবে কিছু টাকা না পাওয়া যায়, তবে তোমার প্রাসাদ দখল করিয়া, আমাদের অধিকৃত কঁশির রাজ্য তোমার স্বসম্পর্কীয় সদাশিব-রাও-নারায়ণকে দেওয়া যাইবে।” রাণী এই কথা শুনিয়া নিরুপায় হইয়া আপনার নিজ সম্পত্তি হইতে এক লক্ষ টাকা বিদ্রোহীদিগের হস্তে অৰ্পণ করিলেন; তখন, বিদ্রোহীরা রাজবাটী ছাড়িয়া দিয়া, আপনাদিগের সমস্ত সৈন্যমধ্যে এই দোহাই-বাক্য প্রচার করিল