পাতা:ঝাঁশির রাণী - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪
ঝাঁশির বাণী।

হইবে, আমাদিগকে কুঙ্কুমপত্রিকা পাঠাইতে ভুলিবেন না” ব্রাহ্মণ কৃতকৃত্য হইয়া প্রস্থান করিল।

 এক দিবস রাণী, মহালক্ষ্মীর মন্দির হইতে প্রত্যাগত হইবার সময়ে, অনেক ভিখারী জমা হইয়াছে দেখিতে পাইলেন। কারণ অনুসন্ধানে জানিলেন, তাহারা শীতের দরুণ কষ্ট পাইতেছে। তিনি হুকুম করিলেন, ভিখারীদিগকে জমা করিয়া প্রত্যেককে এক-একখানি ভূল-ভরা জামা, টুপি ও কম্বল দান করা হয়। রাণীঠাকুরাণীর দয়ার্দ্রতা ও পরোপকার- বুদ্ধি নথে-খার সহিত যুদ্ধে বিলক্ষণ প্রকাশ পাইয়াছিল। ঝাঁশি-সৈন্য-স্থিত আহত লোকদিগের ক্ষতস্থানে যখন মলম-পটি লাগানো হইত, তখন তাহারা রাণীঠাকুরাণীকে দেখিয়া নিজ কষ্ট আকার-ভঙ্গীতে প্রকাশ করিত—তখন তিনি তাহাদিগের গায়ে হাত বুলাইয়া সান্ত্বনা করিতেন। এই সকল সদ্গুণপ্রযুক্ত প্রজারা তাহাকে মাতার ন্যায় ভক্তি করিত।

 রাণীঠাকুরাণী স্বীয় দত্তকপুত্র দামোদর রাওকে অত্যন্ত ভাল বাসিতেন। তাহার যখন যাহা সাধ হইত তখনই তাহা মিটাইবার যথাসাধ্য চেষ্টা করিতেন। রাণী ১৮৫৭ অব্দের জুনমাসে ইংরাজদিগকে সাহায্য করেন, বহিঃশত্রু দমন করিয়া ঝাশি সংরক্ষণের উদ্যোগ করেন—এই সমস্ত বৃত্তান্ত ইংরাজ কর্তৃপক্ষীয়গণকে পত্রের দ্বারা জানাইবার চেষ্টা করেন —নিজ অধিকার পুনঃপ্রাপ্তির জন্য আন্দোলন করিতে ইংলণ্ডে মোক্তিয়ার পাঠান। এই সব কারণে তাঁহার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে, ন্যায়পরায়ণ ইংরাজ-সরকার কখনই অন্যায় করিবেন না— তাহার অধিকার তিনি ফিরিয়া পাইবেন—ইংরাজ সরকার আঁশির গদিতে দামোদর রাওকেই পুনঃস্থাপন করিবেন। এই বিশ্বাসে ভর করিয়া তিনি সুখস্বপ্ন দেখিতেছিলেন এমন সময়, আঁশির রাণী বিদ্রোহী, এইরূপ ভুল বুঝিয়া, ইংরাজ সেনাপতি সর-হিউ-রোজ প্রবল সৈন্য সমভিব্যাহারে আঁশতে আসিয়া