পাতা:ঝাঁশির রাণী - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪২
ঝাঁশির রাণী।

করিয়া, ইংরাজের গোলন্দাজদিগকে নিহত করিয়া, তাহাদিগের তোপ বন্ধ করিয়া দিল। ইহাতে রাণীঠাকুরাণী পরিতুষ্ট হইয়া এক-তোড়া টাকা গোলন্দাজকে বকশিস করিলেন। এই গোলন্দাজের নাম গুলাম-গোষখান।

 যদিও ঝুঁশির সৈন্য, ইংরাজ সৈন্যের ন্যায় রণবিদ্যায় সুশিক্ষিত ও সুব্যবস্থিত ছিল না, তথাপি তাহারা এই যুদ্ধে যেরূপ পরাক্রম প্রদর্শন করিয়াছিল, তাহাতে ইংরাজ-সেনানী বিস্ময়োচ্ছাস প্রকাশ না করিয়া থাকিতে পারেন নাই। ডাক্তার লো-সাহেব, তাহার “মধ্য হিন্দুস্থান” নামক গ্রন্থে ঝাঁশি যুদ্ধের যে সবিস্তার বর্ণনা দিয়াছেন, তাহাতে দেখা যায়, ঝুঁশির সৈন্য ৩১ মার্চ পর্যন্ত, রণশিক্ষিত ইংরাজ-সৈন্যের সহিত, সমান ও সমকক্ষভাবে, যুদ্ধ করিয়াছিল। একজন দেশীয় ভদ্রলোক, যিনি সেই যুদ্ধের সময়, ঝশিতে উপস্থিত ছিলেন, তিনিও যেরূপ বর্ণনা করিয়াছেন, ডাক্তার সাহেবের বর্ণনার সহিত তাহার বিলক্ষণ ঐক্য দেখা যায়। দেশীয় ভদ্রলোকটি এইরূপ বলেন:

 “রাত্রিকালে সহর ও কেল্লার উপর গোলা আসিয়া পড়িতে লাগিল। সেই গোলাগুলা দেখিতে ভয়ঙ্কর! (মটার) “গহবর-নলী” তোপ-নিঃসৃত গোলাগুলা ৫০/৬০ সের ওজনের হইলেও, তোপ হইতে যখন সবেগে ছুটিয়া আসিত, তখন যেন ক্রীড়া-কঙুকের ন্যায় ক্ষুদ্র ও খদিরের ন্যায় লাল দেখাইত। দিবসের প্রখর সূর্যালোকে গোলাগুলা স্পষ্ট দেখা যাইত না; কিন্তু রাত্রির অন্ধকারে তাহারা যেন কতুকের ন্যায় ইতস্ততঃ ছুটিতেছে, এইরূপ মনে হইত। প্রত্যেক লোকের মনে হইত, বুঝি এই গোলা আমার উপর আসিয়াই পড়িবে। কিন্তু প্রায়ই সেই সব গোলা সাত আট শো পদ তফাতে আসিয়া পড়িত। এই প্রকার, দিবারাত্রি যুদ্ধ হইয়া সমস্ত সহর একেবারে ত্রস্ত হইয়া উঠিল। পঞ্চম ও ষষ্ঠ দিব- সেও এইরূপ যুদ্ধ হইল। দেড় প্রহর পর্যন্ত, রাণীঠাকুরাণীর জয় হইয়া,