পাতা:ঝাঁশির রাণী - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঝাঁশির রাণী।
৪৫

নাসিকা, প্রশস্ত-ললাট, বিশাল-কৃষ্ণ-নেত্র, অতীব রূপবতী, সর্ব্বাঙ্গে মুক্তার অলঙ্কার, পরিধানে চওড়া পাড়ের লাল শাড়ি, অঙ্গে রেসমী পাড়ের চোলি, মাল-কোচা দেওয়া, কোমর-বাঁধা,—এইরূপ বেশে কেল্লার বুরুজের উপর দণ্ডায়মান হইয়া, অতীব উগ্র ভাবভঙ্গীসহকারে রক্তবর্ণ গোল। লুফিয়া ধরিতেছেন এবং গোলা ধরিতে ধরিতে হাতে কালিমা পড়ায়, রাণীঠাকুরাণীকে তাহা দেখাইয়া যেন এইরূপ বলিলেন, আমি বলিয়াই এইরূপ গোল লুফিয়া ধরিতে পারিতেছি!

  যাহা হউক, উভয় পক্ষের মধ্যে এইরূপ ঘনঘোর যুদ্ধ চলিতেছে, এমন সময়ে আর একটা গুরুতর ঘটনা উপস্থিত হইল। ঝাশির রাণীকে সাহায্য করিবার জন্য, নানাসাহেবের আদেশানুসারে, তাঁহার সেনাপতি তাত্যা-টোপে, কাল্পী হইতে বিশ সহস্র সৈন্য সঙ্গে লইয়া কুচ করিতে করিতে ঝুঁশির নিকট আসিয়া পৌছিলেন। ঋশির নিকটস্থ উচ্চ ভূমির উপর, ইংরাজদিগের টেলিগ্রাফ-আফিস স্থাপিত ছিল। আফিসের অধ্যক্ষ দূরবীণ-সহযোগে উত্তরদিক হইতে এক বিপুল সৈন্য আসিতেছে দেখিয়া, ভয়সূচক নিশান খাড়া করিল। তরা, শত্রুর আগমনবার্তা জানিতে পারিয়া ইংরাজ সেনাপতি চিন্তিত হইলেন। কেননা বিরুদ্ধ পক্ষের তুলনায়, ইংরাজ-সৈন্য কম থাকায়, ঝশির অবরোধের জন্য, তাহারা স্থানে স্থানে পথ-ঘাট বন্ধ করিয়া অবস্থিতি করিতেছিল। সেই সকল স্থান হইতে তাহাদিগকে সরাইয়া আনিলে, কেল্লার লোকেরা পথ মুক্ত পাইয়া, হল্লা করিয়া ইংরাজদিগকে আক্রমণ করিবে—এইরূপ ইংরাজ সেনাপতির আশঙ্কা হইল।

 এদিকে, বেটোয়া নদীতীরস্থ সমভূমি ময়দানে, তাত্যা-টোপের প্রবল সৈন্য, মহা উৎসাহে, আড্ডা গাড়িয়া অবস্থিতি করিতেছিল। তন্মধ্যে, গোয়ালিয়ার কণ্টিঞ্জেণ্ট ফৌজের যে বিদ্রোহীদল, কানপুরে, সেনাপতি উ্যামের সৈন্যকে পরাভূত করে, তাহারাও সেই সঙ্গে ছিল।