পাতা:ঝাঁশির রাণী - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঝাশির রাণী ।
৫৩

দংশন করিল; তাঁহার মুখমণ্ডল পাণ্ডুবর্ণ হইয়া গেল। তিনি কেল্লার উপর আসিয়া শূন্য দৃষ্টিতে সহরের দক্ষিণ দিকে অবলোকন করিতে লাগিলেন সহস্র গোরা-সৈন্য সহরের মধ্যে প্রবেশ করিয়া হাহাকার উঠাইয়াছে, ইহা তাহার দৃষ্টিপথে পতিত হইল। এই সময়ে কিছুকালের জন্য নৈরাশ্য ও ভীতির চিহু তাঁহার মুখে প্রকাশ পাইয়াছিল; কিন্তু একটু পরেই আপনাকে সালাইয়া শূরত্বের আবেশে হৃদয়কে পূর্ণ করিয়া শেষ পর্যন্ত ইংরাজদিগের সহিত যুদ্ধ করিবেন, এইরূপ দৃঢ় সঙ্কল্প করিলেন।

 অনেক দিনের পুরাতন ভৃত্য এইরূপ দেড় হাজার মুসলমান ও আরবী সৈন্য সঙ্গে লইয়া রাণীঠাকুরাণী সত্বর কেল্লার নীচে অবতরণ করিলেন, এবং কেল্লার বড় দরজা দিয়া বাহির হইয়া, দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হইলেন। সহরের দক্ষিণ বপ্রের উপর দিয়া যে সহস্র গোরা-সৈন্য সহরে প্রবেশ করিয়াছিল, তাহারা তৎক্ষণাৎ তলবার উত্তোলন করিল। রাণীঠাকুরাণী সকলের পশ্চাতে ছিলেন। তিনি এই সময়ে মহা আবেশ সহকারে নগ্ন তুলবার উঠাইয়া সকলের মধ্যভাগে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। গোরা-সৈন্য ও ঝুঁশি-সৈন্যের পরম্পর সাক্ষাৎকার হওয়ায়, তলব রে তলবারে ঝনাৎকার উঠাইয়া দুই পক্ষের লোকই একসঙ্গে মিশাইয়া গেল। এই যুদ্ধে অনেক গোরা নিহত হইল—যাহার অবশিষ্ট ছিল, তাহারা সহরের দিকে পলাইয়া গিয়া, বৃক্ষ ও গৃহের অন্তরাল হইতে বন্দুক ছুড়িতে লাগিল। পশ্চাৎ হইতে একদল গোরা-সৈন্য আসিয়াছিল, তাহারাও তলবার না চালাইয়া, দূর হইতে বন্দুকের গুলিবর্ষণ করিতে লাগিল। এই সময়ে রাণীর পুরাতন সর্দারেরা তাঁহার সম্মুখে আসিয়া তাহার হাত ধরিয়া বলিতে লাগিল “মহারাণি, এই সময়ে সম্মুখে অগ্রসর হইয়া মৃত্যুমুখে পতিত হওয়া আপনার কর্তব্য নহে। গোরা-সৈন্য ইমারতের আড়াল হইতে গুলি মারিতেছে—তা ছাড়া শত শত গোরা সহরে প্রবেশ করিয়াছে। সহরের সকল দরজাই খোলা—এক্ষণে