পাতা:ঝাঁশির রাণী - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঝাঁশির রাণী ।
৫৫

কিন্তু অন্য দিকের গোরারা লোকের গৃহে প্রবেশ করিয়া তাহাদিগকে হত্যা করিয়া সোণা-রূপার সামগ্রী লুট করিতে লাগিল। পুরুষ দেখিলেই ধরিতে লাগিল, যতক্ষণ না তাহাদের অর্থ-সম্পত্তি তাহাদের হস্তগত হইল, ততক্ষণ তাহাদের ছাড়িল না—এমন কি অর্থ পাইলেও, শেষে তাহাদিগকে গুলি করিয়া মারিতে লাগিল। কিন্তু এ কথা বলিতে হইবে স্ত্রীলোকদিগকে উহারা কখন ইচ্ছাপূর্বক মারে নাই। তবে কোন কোন স্থলে এরূপ ঘটিয়াছে, গোরারা সম্মুখের দ্বার দিয়া গৃহে প্রবেশ করিয়াছে। দেখিয়া ঘরের স্ত্রীলোকেরা সতীত্বনাশের ভয়ে পশ্চাতের দ্বার দিয়া বাহির হইয়া কূপের মধ্যে পড়িয়া আত্মহত্যা করিয়াছে। কোথাও বা এরূপও ঘটিয়াছে, ঘরে প্রবেশ করিয়া গোরারা পুরুষকে গুলি করিতেছে, সেই সময় তাহার স্ত্রী আসিয়া স্বামীর কোমর জড়াইয়া ধরিয়াছে—সেই অবস্থায় গুলি স্বামীর গায়ে না লাগিয়া স্ত্রীর গায়ে লাগিয়া সে নিহত হইয়াছে।

 যাহা হউক সন্ধ্যাকাল পর্যন্ত গোরারা এইরূপ লুটপাট করিয়া অবশেষে স্বস্থানে প্রস্থান করিল।

 সইর ইংরাজদিগের হস্তগত হইলে, স-হিউ-রোজ রাজবাটী আক্রমণ করিবার জন্য অগ্রসর হইলেন। রাজবাটীর প্রহরীরা প্রাণপণে যুদ্ধ করিয়া রাজবাটী সংরক্ষণের প্রযত্ন করিল। এই যুদ্ধে অনেক গোরা নিহত ও আহত হইল। কিন্তু ইংরাজের সংখ্যা অধিক থাকায় এবং রাজবাটীর চতুর্দিকস্থ ঘরে আগুন লাগাইয়া দেওয়ায়, প্রহরীরা অতিষ্ঠ হইয়া উঠিল, অবশেষে গোরাসৈন্য হল্লা করিয়া রাজবাটীর মধ্যে প্রবেশ করিল। রাজবাটী হস্তগত হইলে, ইংরাজেরা তত্রস্থ লোকদিগকে নিহত করিল। রাজবাটীর চতুর্দিকে ঝুঁশির একদল অশ্বারোহী প্রহরী ছিল, তাহারা শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ করিয়াছিল। অবশেষে তাঁহারাও নিহত হইল। এইক্ষণে সমস্ত রাজবাটী ইংরাজের হস্তগত হওয়ায়, গোরারা প্রাসাদের মূল্যবান্ সামগ্রী সকল লুটপাট করিতে লাগিল। এই সকল সামগ্রীর