পাতা:ঝাঁশির রাণী - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৬
ঝাঁশির রাণী।

মধ্যে, ব্রিটিশ রাজচিহ্নাঙ্কিত ধ্বজা—“য়ুনিয়ন্ জ্যা” ইংরাজ-সৈন্যের হস্ত- গত হওয়ায় তাহারা পরমানন্দ লাভ করিল এবং সেই ধ্বজা মহা বিজয়োৎ- সাহে রাজবাটীর উপরে উঠাইয়া তথায় ব্রিটিশ আধিপত্য পুনঃস্থাপিত করিল।

 এদিকে রাণীঠাকুরাণী, ঝাশি সৈন্যের বিজয় লাভ হইতেছে না দেখিয়া, কেল্লার প্রাসাদে ফিরিয়া আসিলেন এবং শোকবিহ্বল হইয়া নিশ্চলভাবে বৈঠকখানা ঘরে আসিয়া বসিলেন। সেই তেজস্বিনী মহিলার এইরূপ দীন অবস্থা দেখিয়া, তাহার আশ্রিত-মণ্ডলীর অত্যন্ত কষ্ট হইল; চিন্তাকুল হইয়া এক্ষণে কি কর্তব্য, মৃদুস্বরে তাহারই বিচার করিতে লাগিল। এক প্রহরের পর, রাণীঠাকুরাণী, সহরের কিরূপ দশা হইয়াছে দেখিবার জন্য বারাণ্ডায় আসিলেন। সেই সময়ে যেরূপ হৃদয়- বিদারক তাঁহার দৃষ্টিপথে পতিত হইল, তাহা দেখিয়া তিনি আর অশ্রু সম্বরণ করিতে পারিলেন না। “হলবাইপুরা” নামক সহরের সমৃদ্ধিসম্পন্ন প্রধান ভাগে অগ্নি লাগায় সেখানে হাহাকার উঠিয়াছিল। সেই ভরপূর গ্রীষ্মকালের প্রতপ্ত সূর্য্যকিরণের মধ্যে, এই অগ্নিশিখা প্রজলিত হওয়ায় সহরের লোক অতিষ্ঠ হইয়া উঠিয়াছিল। চারিদিকে ক্রন্দন ও হাহাকার রবকে কোথায় পলাইবে তাহার ঠিক নাই। শত শত বন্দুকের আওয়াজ শুনা যাইতেছে আর শত লোক নিহত হইতেছে। এইরূপ ভীষণ দৃশ্য অবলোকন করিয়া, রাণীঠাকুরাণী কিয়ৎকালের জন্য একেবারে স্তম্ভিত হইয়া রহিলেন। এই সময়ে আবার শুনিলেন, কেল্লার মুখ্য দ্বার-সংরক্ষণকারী সরদার কুম্বর-খুদাবক্স এবং তোপখানার প্রধান গোলন্দাজগুলাম-গোষ-খান্ ইহারা উভয়েই মৃত্যুমুখে পতিত হইয়াছেন। এই সংবাদ শুনিয়া রাণীঠাকুরাণী আরও হতাশ হইয়া পড়িলেন। তিনি আপনার অধীনস্থ প্রধান প্রধান লোকদিগকে ডাকাইয়া এইরূপ বলিলেন, “আমরা আজ পর্যন্ত ইংরাজ-সৈন্যের সহিত প্রাণপণ