পাতা:ঝাঁশির রাণী - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঝাঁশির রাণী।
৫৭

যুদ্ধ করিয়া ঝাশি সংরক্ষণ করিয়াছি, কিন্তু এখনও আমাদের জয়লাভ হইবার কোন চিন্তু দেখা যাইতেছে না। আমাদিগের বীরচুড়ামণি ও গোলন্দাজেরা নিহত হইয়াছে; সুতরাং বপ্রের বন্দোবস্ত যথারীতি না হওয়ায় বপ্র ইংরাজদিগের হস্তগত হইয়াছে। সহরমধ্যে, ইংরাজ-সৈন্য,যত্র তত্র পথরোধ করিয়া বসিয়া আছে। এক্ষণে, হল্লা করিয়া কেল্লার। মধ্যে প্রবেশ করা উহাদিগের সহজ হইয়াছে।

 কেল্লা উহাদিগের হস্তগত হইলে, আমাদিগকে কয়েদ করিয়া, কিরূপ প্রকারে যে উহারা আমাদিগের প্রাণনাশ করিবে তাহার কিছুই ঠিকানা নাই। এইহেতু, বারুদের দ্বারা রাজবাটী উড়াইয়া দিয়া, সেই সঙ্গে আমার ইহলীলা সাঙ্গ করিব এইরূপ সংকল্প করিয়াছি। গোরাদিগকে আমার দেহ স্পর্শ করিতে কখনই দিব না। অতএব, যাহাদিগের মরিতে ইচ্ছা আছে, তাহারা এইখানে থাকুক, বাকী সকলে, আজ রাত্রেই কেল্লা ছাড়িয়া সহরের মধ্যে চলিয়া যাউক এবং আপনার প্রাণ বাচাইবার চেষ্টা দেখুক”। রাণীঠাকুরাণীর এই কথা শুনিয়া, একজন বৃদ্ধ সর্দারের অত্যন্ত কষ্ট হইল; সম্মুখে অগ্রসর হইয়া বিনয়পূর্বক রাণীঠাকুরাণীকে এইরূপ বলিল –“মহারাণি, আপনি কিঞ্চিৎ শান্ত হউন। ঈশ্বরই এই দুঃখ এই সহরের উপর আনিয়াছেন। তাহার আর উপায় নাই। সকল বিষয়ই পূর্ব্বসঞ্চিত কর্ম্মানুসারে হইয়া থাকে। আত্মহত্যা করা মহাপাপ। এই জন্মেই পূর্ব্বপাতকের ফলভোগ করিতেছি, তাহার উপর আর এক মহাপাতকের ভার চাপানো উচিত নহে। যে দুঃখই আসুক না কেন, তাহা দ্বিরুক্তি না করিয়া সহ্য করা আবশ্যক। তাহা হইলে, পরে আর উহার কোন উপসর্গ থাকিবে না। আপনি বীরাঙ্গনা, আত্মহত্যার কথা মনেই আনিবেন না। বিপদ আসিয়াছে; তাহা হইতে এখন উদ্ধার হইতে হইবে। এক্ষণে কেল্লার মধ্যে থাকা যদি নিরাপদ না হয়, তবে আসুন আমরা আজ রাত্রেই শত্রুর ঘের ভাঙ্গিয়া সহরের বাহিরে চলিয়া