পাতা:ঝাঁশির রাণী - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৮
ঝাঁশির রাণী।

গিয়া পেশোয়ার সৈন্যের সহিত মিলিত হই। ইতিমধ্যে যদি মৃত্যু আসে তো খুবই ভাল। এখানে আত্মহত্যা করিয়া পাতক সঞ্চয় করা অপেক্ষা, সম্মুখযুদ্ধে রক্তধারায় স্নান করিয়া স্বর্গারোহণ করা অতীব প্রার্থনীয়”। এই কথা শুনিয়া, রাণীঠাকুরাণী একটু আশ্বস্ত হইলেন এবং তাহার হৃদয় আবার বীরভাবে পূর্ণ হইল।

“ধর্মযুদ্ধে মৃতােবাপি তেন লােকয়ং জিতং ।”

 এই উপদেশ বাক্য অনুসারে, তিনি রণাঙ্গনে যুদ্ধ করিয়া প্রাণত্যাগ করিবেন এইরূপ সংকল্প করিলেন। কিন্তু শ্রীমন্ত দামোদররাও বলেন, এই বৃত্তান্ত ঠিক্ নহে। আসল কথা, “রাণীঠাকুরাণীর প্রধান কর্মচারিমণ্ডলীই হতাশ হইয়া বারুদে আগুন লাগাইয়া প্রাণত্যাগ করিবার প্রস্তাব করে, এবং রাণীঠাকুরাণী এই প্রস্তাবে অনুমোদন না করিয়া, যুদ্ধে প্রাণত্যাগ করিবেন, এইরূপ সংকল্প করেন।”

 সে যাহাই হউক, সন্ধ্যার পর, রাণীঠাকুরাণী আপনার নিকটস্থ পরিজন মণ্ডলীকে ডাকাইয়া আনাইয়া তাহাদিগের নিকট অন্তিম বিদায় গ্রহণ করিলেন এবং তাহাদিগকে যোগ্য পুরস্কারাদি দিয়া, কেল্লার গুপ্তদ্বার দিয়া সহরের মধ্যে পাঠাইয়া দিলেন। এই চিরবিচ্ছেদ-প্রসঙ্গে, রাণীঠাকুরাণীর অনেকদিনকার পুরাতন ব্রাহ্মণ ভৃত্য ও দাসীগণ এবং অন্যান্য আশ্রিতমণ্ডলীর দারুণ কষ্ট উপস্থিত হইল। সকলেই অপূর্ণ- নয়নে প্রিয় স্বামিনীর পাদবন্দনা করিয়া বিদায় গ্রহণ করিল। গুলি প্রভুভক্ত সেবক, রাণীঠাকুরারাণীর সহিত যাইবার জন্য প্রস্তুত হইল এবং তাহাদিগের ইচ্ছা জানাইয়া তাহার অনুমতি গ্রহণ করিল। রাত্রি ১২ ঘটিকার সময় সমস্ত প্রস্তুত করিয়া রাণীঠাকুরাণী কেল্লা হইতে বাহির হইবার সঙ্কল্প করিলেন। তাঁহার পিতা, মে পিতাবে প্রভৃতি আত্মীয়-মণ্ডলী সকলে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হইয়া অশ্বপৃষ্ঠে আরোহণ করিলেন। পথ- খরচা হিসাবে কিঞ্চিৎ অর্থ থলিয়ার মধ্যে ভরিয়া, তাহারা অশ্বারোহী কতক-