পাতা:ঝাঁশির রাণী - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঝাঁশির রাণী।
৫৯

অনুচরবর্গের জিম্মা করিয়া দিলেন; এবং সংস্থানের কুলপরম্পরাগত। রত্নাদি, হস্তিপৃষ্ঠে হাউদায় ভরিয়া, সেই হস্তী আপনাদিগের মধ্যভাগে রাখিলেন। প্রায় দুই শত বাছা বাছা সওয়ার সঙ্গে লইয়া ও পাঠান প্রভৃতি বিজাতীয় সৈন্য সমভিব্যাহারে প্রধান সর্দারগণ কেল্লা হইতে বাহির হইবার নিমিত্ত তৎপর হইল। স্বয়ং রাণীঠাকুরাণী পুরুষবেশ করিলেন, অঙ্গে তার-জড়িত বৰ্ম ধারণ করিলেন এবং কোমরে কিরিচ, প্রভৃতি অস্ত্রশস্ত্রের সহিত একটি দিব্য তলোয়ার ঝুলাইয়া আড়াই হাজার টাকা মূল্যের একটি সাদা রঙ্গের তেজালো ঘোড়ার উপর আরোহণ করিলেন। আপনার সঙ্গে তিনি কিছুমাত্র অর্থাদি লইলেন না। কেবল একটি রূপার পেয়ালা বস্ত্রাঞ্চলে বাঁধিয়া লইলেন এবং একটি অল্পবয়স্ক ক্ষুদ্র বালককে রেশমের কাপড়ে বঁধিয়া পৃষ্ঠোপরি লইলেন। এই বালকটিই যে রাণীঠাকুরাণীর প্রাণপ্রিয় দত্তকপুত্র দামোদর রাও, তাহা বোধ হয়। পাঠককে বলিতে হইবে না।

 যাত্রার সমস্ত আয়োজন প্রস্তুত হইলে পর, “জয়শঙ্কর” “হর হর মহাদেব” এইরূপ বাক্য উৎসাহভরে গর্জন করিতে করিতে সৰ্বমণ্ডলী কেল্লার নীচে অবতরণ করিলেন। প্রথমতঃ তাহারা কেল্লার সুরঙ্গ-রাস্তা। দিয়া যাইবেন মনে করিয়াছিলেন, কিন্তু মধ্যরাত্রিপ্রযুক্ত সে রাস্তা খুঁজিয়া পাওয়ায়, অতীব দক্ষতা-সহকারে কেল্লাবুরুজের উপর দিয়া, ইংরাজ- সৈন্যের গতিবিধির উপর নজর রাখিয়া, সহরের মধ্যস্থিত উত্তর দরজা দিয়া বাহির হইয়া পড়িবেন, এইরূপ মৎলব করিলেন। যে সময়ে রাণীঠাকু- রাণী, ঝাশিকে শেষ নমস্কার দিয়া, সমস্ত সৈন্য সমক্ষে, আপনার সেই তেজস্বী অশ্বকে পূর্ণবেগে ছুটাইয়া চলিলেন, সেই সময়ে সর্বলোক রাণীঠাকুরাণীকে বিদায়-নমস্কার দিবার জন্য, রাস্তার দুই পার্শ্বে, কেল্লার মধ্যে দণ্ডায়মান ছিল। রাণীঠাকুরাণী সকলের নিকট সপ্রেম বিদায় গ্রহণ করিয়া, অতি সত্বর, কতকগুলি সওয়ার-সমভিব্যাহারে, উত্তর দরজা দিয়া