পাতা:ঝাঁশির রাণী - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৬
ঝাঁশির রাণী।

আসিয়া উপস্থিত হইলেন। এবং তিনি স্বয়ং সম্মুখবর্তী হইয়া সতেজে কাল্পী-সৈন্যের বিরুদ্ধে ধাবমান হইলেন। কাল্পীর সৈন্য এতক্ষণ ভাং পান করিয়া নেশার ঘোরে উন্মত্তের ন্যায় যুদ্ধ করিতেছিল, কিন্তু উষ্ট্রপৃষ্ঠ হইতে যখন গোল-গুলি অজস্র বর্ষণ হইতে লাগিল, তখন তাহাদিগের চেতনা হইল এবং আর রণস্থলে তিষ্ঠিতে না পারিয়া পলাইতে আরম্ভ করিল। এক্ষণে রাণীঠাকুরাণী হতাশ হইয়া রাও সাহেব পেশোয়ার ছাউনী মধ্যে ফিরিয়া আসিলেন। ইংরাজেরা কাল্পী অধিকার করিল এবং দুই লক্ষ টাকার অধিক মূল্যের যুদ্ধ-সামগ্রী তাহাদিগের হস্তগত হইল।

 এদিকে, রাও-সাহেব পেশোয়া পরাভূত হইয়া, সসৈন্যে গোয়া-লিয়ারের ৪৬ মাইল দূরে, গোপালপুর নামক এক সহরে পলাইয়া গেলেন। রাণীও তাঁহার সঙ্গে ছিলেন। ক্রমে সেখানে ত্যত্যা-টোপে ও বান্দেওয়ালা নবাবও আসিয়া জুটিলেন। তাঁহাদিগের সকলকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় ও পেশোয়াকে চিন্তাগ্রস্ত দেখিয়া রাণী তাহাদিগকে এইরূপ বলিলেন “আজ পর্যন্ত মারাঠীরা যে শোর্যবীর্য প্রদর্শন করিয়া আধিপত্য স্থাপন করিয়াছে, দুর্ভেদ্য ও বলাঢ্য কেল্লার আশ্রয়ই তাহার মুখ্য কারণ। শ্রছত্রপতি শিবাজি মহারাজ যে, যবনদিগকে পরাভূত করিয়া হিন্দু সাম্রাজ্য স্থাপন করেন, সেও সিংহগড়, রায়গড়, নো আদি কেল্লার বলে। তিনি প্রথমে আত্মরক্ষণের জন্য ঐ সকল প্রচণ্ড কেল্লা হস্তগত করেন, পরে, শোর্য-পরাক্রম প্রদর্শন করিয়া মহারাষ্ট্রীয় আধিপত্য স্থাপন করেন। অতএব, পূর্ব্ব-অভিজ্ঞতা হইতে জানা যাইতেছে যে, কেল্লার সাহায্য ব্যতীত যুদ্ধ করা ব্যর্থ। আমাদিগের অধীনে, ঝাঁশি, কাল্পী প্রভৃতির ন্যায় অনেকগুলি কেল্লা থাকা প্রযুক্তই আমরা আজ পর্যন্ত ইংরাজদিগের সহিত যুদ্ধ করিয়া টিকিয়া থাকিতে পারিয়াছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ সেই সকল কেল্লা আমাদিগের হস্তচ্যুত হইয়াছে।