৬৮ . ঝিলে জঙ্গলে শিকার । গলি ক্রমে রাজপথে পরিণত হয়। এ সব পথের এক দিকে খাড়া পাহাড় অন্য দিকে গভীর জলাশয়, কিম্বা হয়ত দুই দিকেই সােজা পাহাড় প্রাচীরের মত উচু হয়ে থাকে। কাজেই এ সব বাধা এড়িয়ে খাটো পথে নীচে নালায় কিম্বা মাঠে নেমে যাওয়া সম্ভব নয়। জমাত্রেই স্বভাবতঃ এমন সব বাধা ব্যবধান বােকে, আর পাশ কাটিয়ে চলে। বুদ্ধিমান শিকারীর সতর্ক সাভিনিবেশ দৃষ্টিতে সহজেই ইহা ধরা পড়ে। রাতে অন্ধকারের সুবিধা পেয়ে বাঘ ( চিতাবাঘ সম্বন্ধেও এ কথা খাটে) খােলা পথে যায়, কিন্তু দিনের আলোকে অন্ধকার গলি ঘুজি দিয়েই চুপি চুপি যেতে ভালবাসে। তবে যদি তাড়া খেয়ে বিশেষ বিপদে কোন খোলা পথে এসে পড়ে তবে যত সত্বর সম্ভব সে পথ অতিক্রম করে যেতে পারলে বাঁচে। সাধারণত, সােজা পথ এবং খােলা জায়গা এড়িয়ে চলে। . নিশাভ্রমণ কালে তারা “খুস্কি পথ” আর গরুর গাড়ীর রাস্তা ধরেই যায়, কেন না তাদের জানা আছে | এ পথে গেলে জলা ভূমি কিম্বা জলাশয়ের বাধা অতিক্রম করতে হবে না, কোন বিপদে পড়তে হবে না। আমি একবার দেখেছি বাঘ গরুর গাড়ীর রাস্তা ছেড়ে সােজা পথে গন্ধে গন্ধে একটা মহিষের সন্ধানে গিয়ে পৌছেছিল। মহিসটা বনের মধ্যে দূর একেবারে চোখের আড়ালে প্রায় দুশ গজ দূরে বাঁধা ছিল। এদের ঘ্রাণ শক্তি এমনই তীক্ষ! নালার বালুকা হতে তার পায়ের চাপে জল তখনও আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসছিল। অতি ছােট অন্যান্য পারের দাগের আশ পাশ ভেঙ্গে গিয়েছে, সে গুলি তখনও ভিজে রয়েছে। সে সব গাছের গা ঘেসে গিয়েছে, নাড়া পেয়ে তা থেকে শিশির মাটীতে ঝরে পড়েছে। তার পরে কোন শিশির ডাল পালায় আর পড়েনি। যে পথে মােষটাকে টেনে নিয়ে গিয়েছে, সেখানকার ডাল আর পাতার উপরে কাদার দাগ তখনও বঁাচা এ সব হতে স্পষ্ট বােঝা গেল হত্যাকাণ্ডটা দিনের আলোতেই সমাধা হয়েছিল। এই বড় রাস্তার পাশে, জলের ধারে, কোপ কিম্বা বেত বনের প্রবেশ ও নির্গম পথে ব্যাজ পদচিহ্নের সন্ধান করতে হয় -আর এই চিহ্ন হতে আবিষ্কার করতে হয় যে তারা ঘরে ফিরেছে না চরতে গেছে। এই চরণচিহ্ন অনেক ১ময় বহু দূরে দূরে দেখতে পাওয়া যায়, একটর সঙ্গে আবার অন্যটীর সঙ্গতি আবিষ্কার করাই অরণ্য বিদ্যার পরিচয়। কোথাও হয়ত দেখবে একখণ্ড পাথর কিম্বা গুটি কত পাতা উল্টে পুড় আছে। কোথাও বা গুরু পদ ভারে ক্ষীণ তরু শাখা, সুকুমার লতা দলিত ভুলুষ্ঠিত হয়ে পড়েছে। ঐতিহাসিকের মত সময়ের গণনাও ঠিক রাখতে হয়, কেননা প্রতি প্রহরেই পরিবর্তন ঘটে, ধূলো উড়ে পড়ে চিঃ বিলুপ্ত করে দিয়ে যায় । অদ্রি স্থানে দিবসাতীত ঘটনা অমনােযােগী পরিদর্শকের চক্ষে প্রহর পূর্বেকার বলে প্রতিভাত হয়। গবাদি জাতীয় চতুষ্পদ জন্তু প্রস্তর কিম্বা শুরু পত্রের উপর খুরের যে চিহ্ন রেখে যায়, শ্বাপদের বালিসের মত নরম পায়ের দাগ তা থেকে সম্পূর্ণ বিভিন্ন। বেলা করে ঘরে ফিরিবার পথে শ্বাপদ যে পদচিহ্ন রেখে যায়, শিকারের সন্ধানে রাত্রে যখন অভিযান করে তা হতে স্বতন্ত্র। যখন তুমি এই সব পাদলিপি কতকটা নির্ভুল ভাবে পড়তে পারবে তখন তােমার পক্ষে তাদের গতিবিধি, আশ্রয়স্থান, হঠাৎ তাড়া খেয়ে কাবার জায়গা, এক পথ ছেড়ে অন্য পথ অবলম্বন, ইত্যাদি ব্যাপার অনুমান করা কঠিন হবে না। কোথায় ' কোন গাছ কি কেমন পাথরের আড়ালে আশ্রয় নিয়ে লক্ষ্য করলে কৃতকাৰ্য্য হবে ; জন্তু আহত হলে তােমায় সহসা আক্রমণ করতে পারবে না, এ সব কঠিন কথা সহজেই বুঝতে পারবে। দাড়িয়েই থাক কি আসনপিড়ি হয়ে বসেই থাক, তোমাকে কিন্তু আসনসিদ্ধ যােগীর মত স্থির নিশ্চল
পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/১০০
অবয়ব