ঝিলে জঙ্গলে শিকার। . ৬৯ হয়ে থাকা শিখতে হবে। অতি সামান্য নড়াচড়া করলেও তুমি ধরা পড়ে যাবে, হয়ত আক্রান্ত হবে, নয়ত নিঃসন্দেহে সেবারের মত শিকারের সমস্ত সুযােগ ও সুবিধা হারাবে। যে সব পাখী মাটীতে বাসা বেঁধে বাস করে, কোন জন্তু নিতান্ত নিকটে না এলে তারা আপন বাসা ছাড় না, ছাড়লেও বেশী দূরে উড়ে পালায় না। জন্তুটী যাতে করে তার বাসার সন্ধান জানতে পারে সেই অভিপ্রায়ে মাঝে মাঝে এদিকে ওদিকে অল্প দূরে উড়ে চলে যায়। ভিন্ন ভিন্ন সময়ে কয়েকবার এই রকম পাখী আমায় বাঘের আসন্ন-আগমন জানিয়ে দিয়েছিল। বন ঘেরাও করে যে সকল লােকজন আসছিল তারা তখনও দুরে ছিল বলে, পাখীটীর ব্যস্ত সমস্ত হয়ে বেশী দূরে উড়ে পালার আবশ্যক হয় নি। বানরের দলও অনবরত গোলমাল করে, কাৰ্যতঃ বাঘ সম্মুখে তাড়িয়ে অনবার সাহায্য করে, তােমাকেও আগে হতেই তার আগমন বার্তা জানিয়ে দেয়। অনেক সময় বরাহ অবতারের অকারণ স্পৰ্দ্ধাপূর্ণ ফুংকার, বনের রঙ্গভূমিতে ব্যাঘ্রবীরের প্রবেশের প্রস্থান জ্ঞাপন করে। এই সেদিন বৃহৎ এক ভল্লুকদম্পতি তাড়া খেয়ে একই ঘাটে নেমেছিল, কিন্তু তারা একটা ব্যাঘ্র পরিবারের (বাঘ, বাঘিনী আর পূর্ণবয়স্ক পুত্রের) কি? পিছনে পড়ে ছিল। যেমনি এদের দেখা, অভ্যস্থ পথ ছেড়ে পাহাড়ের আড়াই পথ দিয়ে ভয়ে চীৎকার করতে করতে ঝাঁপিয়ে পড়ল ! তাদের ব্যবহারেই ব্যাপার খানা আমি সহজেই অনুমান করতে পারলাম। পরে ঘটনা পরম্পরায় সে অনুমান যে অভ্রান্ত ও প্রমাণ হয় গেল। শীতকালে পাহাড়ের জঙ্গলে চোরকাটা এক বিষম উপদ্রব। এই কালো কালাে কাটা বাথ কিম্বা চিতাবাঘের শীতকালের পুরু কোটে আটকে যায়। চামড়ার পট্টি না পরে মােজা যদি পর, তবে তােমারও এ দশা হয়। বন পিটাবার সমঃ চোর কঁাটা ভরা জমি বাদ দিয়ে গেলেও কোন ক্ষতি হয় না, কেন না কোন জন্তু পাৰত পক্ষে সে রাস্তা মাড়ায় না। একবার একটা বা গরু মেরে তাকে নালা দিয়ে টেনে পাড়ের পাশে চোর কাটা ভরা এমনি একটা জমিতে গাছের নিচে নিয়ে গিয়েছিল। বেশী দূর পর্যন্ত কিন্তু যায়নি, আর যেখানে চোর কাটা কাটা হয়েছিল, সেই পরিষ্কার জায়গা টুকুতে তাকে মুখে করে লাফ দিয়ে যাবার আগে অল্পক্ষণের জন্য রেখেছিল। দুই এক গ্রাস মাংস খাবার আগে দেখলাম সে সাবধানে চারিদিকের ঘাস পায়ের চাপে বেশ ভাল করে সরিয়ে দিয়েছে। তার জাতীয় স্বভাব বশতঃ সে যে কোন্ পথে ফিরবে ‘ত অনুমান করা কঠিন হয় নি। চোর কাটা যে তার গতিবিধির সাক্ষ্য দিবে সে উপায় সে রাখেনি। তােমরা জান ফেউ বাঘের পিছু পিছু চলে, কিন্তু সব জায়গায় এ কথা ঠিক নয়। এ ডাক শুধু ভয়ের ডাক। আমি একবার দিনের ভরা আলোতে একটা শৃগালকে পিছনের পায়ে উবু হয়ে বসে আমাদের মােহনলাল হাতীকে দেখে এই ভাবে চীৎকার করে গলাভাঙ্গতে শুনেছি। নিরীহ মােহনলাল কিন্তু একান্ত মনে কিছু দূরে সুস্থ স্বচ্ছন চিত্তে কলাগাছের কচি . ঘােড় ভক্ষণে নিযুক্ত ছিল, শৃগাল চন্দ্রের কোন হানি সে করেনি। মাহুতও হাতীর উপরু ছিল না, আর আমি প্রায় ৩০০ গজ দূরে একটা উচু ঢিবির উপর দাঁড়িয়ে ছিলাম। কিন্তু যদি দেখ বনের ধাঙড় জাতীয় এই জন্তু দুচার জন একত্র হয়ে জঙ্গলের আনাচে কানাচে
পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/১০১
অবয়ব