৭ ঝিলে জঙ্গলে শিকার কেবলই ঘুরছে, আর থেকে থেকে কেউ ডাকছে—তাহলে বুঝবে এর কোন হেতু নিশ্চয়ই আছে—আর সেই সময় যদি তুমি জঙ্গলটা পিটিয়া দেখ তাহলে বুঝবে কাজটা ভুল হয় নি। তার এ পরিশ্রমের পুরস্কার নগদ আদায় হয়ে আসবে এ কথা নিঃসন্দেহ। এ প্রসঙ্গে আর অধিক কথা বলা অনাবশ্যক। জন্তুর অনুসন্ধান কাজ বিজ্ঞানবিশেষ ; অমামুষিক ধৈৰ্য্য, অশ্রান্ত উৎসাহ ও অধ্যবসায় বলেই আয়ত্তসাধ্য। এ বিদ্যা অর্জনের বিশেষ ও অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ মনোযোগ, চারিদিকে সতর্ক দৃষ্টিপাত, জাগ্রত সচেতন মন, বুদ্ধি বিবেচনা। দুঃখের বিষয় আধুনিক শিক্ষাপদ্ধতিতে মনের এই সতর্কতা বৃদ্ধির কোন উপায় করা হয় না। ছত্রগণ এ সম্বন্ধে শিক্ষকের নিকট হতে কোনরূপ সাহায্য কিম্বা উৎসাহ লাভ করে না। আমার মতে যে নিপুণ অধ্যাপক মশক, Snipe এবং হস্তী জাতীয় জীবের প্রভেদ আবিষ্কার করতে পারেন না তাঁকে অধ্যাপনার ভার দেওয়া কখনই উচিত নয়। উপরােক্ত তিনটি জীবেরই অযথা দীর্ঘ নাসিকাগ্রভাগ, চঞ্চু এবং শুণ্ড আছে। আর চালস ল্যাম্বের অননুকরণীয় ভাষায় বলতে গেলে তিনটি জীবই অধ্যাপকদের মত পালকের কলমের সাহায্যে জীবনী রস শােষণ করে থাকেন। অযথা হলেও শেষােক্ত প্রাণীগণের এ বিয়ে তৎপরতা সমধিক।। ১৬ই জানুয়ারী, ১৯১৮ মেহের অলকা কল্যাণ, তােমাদের কাছে এখন আমার দুটী মৃগয়া যাত্রার বর্ণনা এখানে দেব। একটী দুর শেল প্রদেশে, অপর সুজলা, সুফলা, শস্যশ্যামলা বঙ্গভূমির সমতল প্রদেশে,—আমাদের দেশের বাড়ীর নিকটে। আশা করি এ কথা তােমাদের ভাল লাগবে। অতীতের পুরুষােচিত সাংসিক কাজের স্মরণ, আর ভবিষ্যতে তার আশা ও কল্পনা দুই সমান আনন্দজনক। পার্বত্য . প্রদেশে আর সমতল প্রান্তরের অভিনীত দৃশ্যাবলীর সুখ স্মৃতির মধ্যে বার বার ফিরে ফিরে যেতে মন ভালব সে। আশায় যখন নিরাশ আসে, ভাগ্যে বিঘ্ন বিপদ যখন ঘটে, কষ্ট অসুবিধা যখন ভােগ করতে হয়, এ সব সেই সময়ের জন্যই বিরক্তিকর। ভেবে দেখতে গেলে এই সমস্ত দুর্ঘটনার দুখ, বিলাসসম্ভোগের সুখের মতই অকিঞ্চিৎকর। বৃষ্টিতে ভিজে শ্রান্ত শরীরে কোন ক্রমে তাঁবুতে ফিরে দেখ তেজস পত্র সব কি যে কোথায় গিয়েছে তার ঠিক নেই, রাতের অন্ধকারে অফুরন্ত পথে হাতীর উপর আরােহী হয়ে গজেন্দ্র গমনে জলা ভূমি আর জঙ্গলে পথ ভুলে ঘুরে মরে, অসময়ে ফিরে আস ; শিকার যদি তুমি সত্যি ভালবাস তা হলে এ সব অসুবিধা দুঃখ বলে মনেই হয় না। গৃহের আরাম ও আনন্দের মধ্যে ফিরে, বনবাস দুঃখ ক’দিন বা আর মনে থাকে। সহরের ইট কাট, পাষাণ পথ দু দিনেই, ** মনে শান্তি নিয়ে আসে। আবার সেই বনপথ, খােলা মাঠের খােলা হাওয়া, বনানীর • খামাঞ্চলের স্নিগ্ধ ছায়ার জন্য মন উতলা হয়ে উঠে। প্রকৃতির যে সৌন্দর্যের সঙ্গে রাজপথের দেখা হবার কোন সম্ভাবনা নাই, সেই নিম্মল শুদ্ধান্ত শােভা উপভােগের পরম সুখ কিন্ধা চরম দু:খের জন্য অন্তরাত্মা ব্যাকুল হয়। প্রকতির অন্তঃপুরে একবার প্রবেশ করতে পারলে
পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/১০২
অবয়ব