ঝিলে জঙ্গলে শিকার। ৭১ যে আনন্দ ও শান্তির অধিকারী হওয়া যায়, আধুনিক সভ্যজীবনে সে আনন্দ নিতান্ত দুর্লভ। আজ কালকার এই কাজ আর অমোদের স্রোতে পড়ে মানুষ মনােযােগ দেবার, অভিনিবেশের সহিত লক্ষ্য করবার, দেখবার শক্তি গরিয়ে ফেলেছে। এই দূষিত কুৎসিং নগরীর বাহিরে না গেলে, আকাশের চল তারা গ্রহ নক্ষত্র যথার্থই যে আমাদের বন্ধু এ কথা জানবার সুবিধা হয় না। এখানকার এই গ্যাসের আলাে আর বিজলীবাতি আমাদের বিক্ষিপ্ত দৃষ্টি হতে তাদের অন্তরাল করে রাখে। কালপুরুষ আকাশের কোন স্থানে আছে তাই দেখেই রাত্রের কত প্রহর অতীত হল কিম্বা কত প্রহর বাকী, সে কথা সহজেই বুঝতে পারা যায়। চঞ্জমার ঘােড় কলা, আকাশ পথে তার গতি, তার বঙ্কিম বিচিত্র আকার, উদরান্ত কালের সঙ্গে কি আশ্চর্য্য সাম্য রক্ষা করে ! সে রহস্য কথা তােমার বিস্মিত চোখের সম্মুখে স্বতই অবারিত হয়ে যায়। যে অভীষ্ট লাভের জন্য তুমি বনবাস বরণ কর, তার সাধনায় দিনের পর দিন, প্রকৃতির খোলা বইএর পাতাগুলি তুমি অনবরত পড়তে পাও, আর পশু পক্ষী, গ্রহনক্ষত্র, পৰ্বতপাদপ সকলেরই কাছ হতে অনেক জ্ঞান উপার্জন হয়। “IIow dull it is to pause, to make an End, To rust, unburnished, not to Shine in use ! As tho' to breathe were life.” রেল পথে শ্রান্তিকর ভ্রমণের পরে, অতীত প্রায় রাত্রর অত অল্প অবf-৪ কাল বিশ্রাম করে, আমরা বর্তমান ঝুগের বায়ুরথারোহণে যাত্রা করলাম। বিরল পথে হুহু শব্দে একখানি হাওয়া গাড়ী ছুটে চলেছে দেখতে সবারই ভাল লাগে। পীর মধ্য হতে ছােট ছেলে মেয়ের। পথের দুধারে ভিড় করে দাঁড়াল, তরুণীরা এলােচুলে ঘরের দুরে অবাক হয়ে দাড়িয়ে রইল। তাদের মাথার ঘােমটা যে খসে পড়েছে সে সম্বন্ধে কোন হুসই হিল না। বােকার মত ব্যবহার করলে শুধু দল ছাড়া গরুগুলো। আমাদের পথে হতভম্ব হয়ে দাঁড়ায়, আর যতক্ষণে রাখাল এসে তাদের চতুর্দশ পুরুষর সদগতি আর সঙ্গে সঙ্গে তাদের পিঠে ভাল করে লাঠির ব্যবস্থা না করে ততক্ষণে অর নড়ে না। রাখালের আর তাদের ভাষা এক না হলেও গালাগালি বুঝতে কোন গোলই হলন। দেখলাম। অনেক বৎসর আগে আমার বিলাত প্রবাস কালে উইটসারে (Wiltshire' এ আমি এক বন্ধুর সঙ্গে শিকার করছিলাম। একদিন সকালে বন্ধুর দুই জার্মান সৈনিক অতিথি এল। হঠাৎ দেখলাম বন্ধু। বনের আশ্রয় ছেড়ে খোলা পথ দিয়ে দৌড়ে চলে যাচ্ছে। আমি তার কাছে গেলে বলেন ভাই তুমি ফিরে যাও, হতভাগা জৰ্মান গুলাে বেপরােয়া পাখী না মেরে আমার দিকে কেবলই গুলি করছিল। আমি বনের আশ্রয়ে না ফিরে অপরাধীদের দিকেই চীৎকায় করতে করতে দৌড়ে গেলাম। উভয়ে উভয়ের ভাষা বুঝিনে দেখে, আমি ইংরাজী ছেড়ে বাঙ্গালা ভাষার বাহা বাহা যত গালাগালি জানা ছিল সব দিলাম। দেখলাম অসুধ ধরেছে, আমার মনােগত ভাব তা বুঝেছে। তার পর হতে তাদের ব্যবহার সম্পূর্ণ নির্দোষ হয়ে গেল বটে কিন্তু বন্দুকের নিশানা তেমনই বিশ্রী রয়ে গেল। ঘণ্টা খানেক অতি সুনার পথে মােটর গাড়ীতে যেন উড়ে চললাম। তার পরে সৌখিন যান বাহনের কাছে বিদায় নিতে হল। হাতীর পিঠে যদি গদি বা না থাকে তা হলে বেশী দূর যাওয়া কষ্টকর, অথচ এমন সব পথে এর চেয়ে ভাল বাহন আর অল্পই আছে। নদী নালা খানা খন পেরিয়ে পাহাড়ের পথে গজেন্দ্র গমনে কোনরূপে অগ্রসর হতে লাগলাম। স্থানে স্থানে গতি বিধি আশাতীত দুষ্কর হয়েছিল। পাহাড়ের পাড় একেবারে খাড়া, তাতে আবার অনেকগুলি বাঁশঝাড়
পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/১০৩
অবয়ব