৭৪ ঝিলে জঙ্গলে শিকার। আর হয়ত টিকবে না। এই দুটা জীবের সেই আসন্ন বিচ্ছেদের কথা আমি যখনই ভাবি তখনই মনে দুঃখ হয়। আমার গল্পের খই কোথায় হারিয়ে ফেলেছি। সেই পৰ্বত সঙ্কটের পাশটীতে যেখানে ইনস্পেক্টর সাহেবের পাঁচসিকা দামের চটি আমার পঁচিশগুণ বেশী দামের বুট জোড়াটাকে হার মানিয়ে দিয়ে ছিল। আবার আমরা হাতীতে উঠলাম। শীতের দিন, দেখতে না দেখতে বনের ছায়া দীর্ঘতর হল। সময়টা বড়দিনের কিছু আগে। ওভার-কোট-পরা আমার চেয়ে বন্ধু দেখলাম সাল জড়িয়ে বেশ গরমে আর বেশী আরামে রয়েছেন। সকাল ৮টা হতে আমরা বেশ ক্রমান্বয়ে চলেছিলাম। কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর আবার যাত্রা করলাম। পথ যেন আর শেষ হয় না। আমাদের বুদ্ধিমান পথপ্রদর্শক ‘গোটিয়ার” তত্ত্বাবধানে সন্ধ্যার পরে যে গ্রামে এসে পৌঁছিলাম সেটি কিন্তু মােটেই আমার গন্তব্য স্থান নয়। বন্ধুবর এতেও দমলেন না। কাঠ জড় করে গণগণে আগুণ জ্বেলে আমাদের শ্রান্ত ব্যথিত দেহের বিশ্রাম ও শীত নিবারণের ব্যবস্থা করে দিয়ে, সে শীতের রাতে ঘোড়ায়, অন্ধকার বনের পথে আবার ব্যাগ বােচকা বিছানা প র তল্লাসে বেড়িয়ে পড়লেন। রাত দুপ্রহরে ঘােড়র পায়ের খট খট শব্দে লুপ্ত সম্পত্তি উদ্ধারের শুভ সংবাদ আমাদের কানে এসে পেীছল। পথ চিহ্নহীন; বনের পথে অন্ধকার রাতে তার এই যাত্রা যে কত বিপসঙ্কুল, তঁাকে কত কষ্ট যে সহ্য করতে হয়েছিল, সব বাধা বিঘ্ন অতিক্রম করে কি পরিমাণ সহিষ্ণুতা ও সাহসের পরিচয় তিনি দিয়েছিলেন, সে কথা, যারা এমন কাজ কোন দিন করেছেন, তারাই বুঝবেন, অপরের বােধগম্য হওয়া সম্ভবপর নয়। সকাল হল। আকাশ পরিষ্কার, আর বাতাস কনকনে ঠাণ্ডা। বন পিটন যাদের কাজ, ভিন্ন ভিন্ন দলে একত্র হয়ে তারা তাদের সামান্য বন্ধনের আয়ােজনে ব্যস্ত হয়েছিল। ঞ্জালানি কাঠের অভাব ছিল না। শীত এমনই বেশী যে আগুণ না পোয়ালে বসা যায় না। শিকারীরা ফিরে এসে তাদের অনুসন্ধানের ফলাফল আমাদের জানালে। বেলা দশটায় আমরা যাত্রা করবার জন্য প্রস্তুত হলাম। যেখানে বসে আমাকে ঘটী আগলাতে হবে, পাহাড়ের সেইখানটাতে পৌঁছতে অনেক আয়াস করতে হল। পথ দুৰ্গম, দুয়ারাহ আর বিপজ্জনক। ইনস্পেক্টর চটি খুলে ফেলে একখানা পাথর হতে আর এক খানাতে পা. রেখে কাঠবেড়ালীর মত সহজে উঠে গেলেন। শিকারীরাও অনায়াসে তাকে অনুসরণ করলে। গন্তব্য স্থানে পৌছবার সেই সংকীর্ণ দুর্গম পথে, আমি দুই একবার উলটে পড়তে পড়তে কি রকম যে বেঁচে গেছি, সেই কথা মনে হছে গাটা শিউরে শিউরে উঠতে লাগল। শিকারীর মধ্যে কেউ কেউ ছিল যাদের পরণে পার পরিচ্ছদ। কোমর হতে এই ঘাগরা গুলি তাদের হাঁটু পর্যন্ত পৌঁছত। গাছের পাতা কোন গাছের সুতাে দিয়ে একত্রে সুন্দর করে সেলাই করা। এগুলি দেখতে সুশ্রী; তাছাড়া | সাধারণ কৌপীনের চেয়ে কাজের, ভব্য ও লজ্জানিবারক। এই শিকারীরা কাছেই কোন পাহাড় হতে আমাদের কাজে নেমে এসেছিল। তাদের আদিম অভ্যাসগুলি এখনও ত্যাগ করেন। দু-একজন ছাড়া প্রায় সকলেরই অঙ্গসৌষ্ঠব দর্শনীয়। যদিও পরিধেয় বস্ত্র অতি সামান্যই ছিল, তবু তালের সুগঠিত দেহসৌন্দৰ্য্য তাদের লজ্জা ও শীলতা দুই রক্ষা করেছিল। | শিকারীদের বাঘ খুজে বার করবার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। যাকে তার খুজে ফিরছিল সে কিন্তু ইতিমধ্যে সবারি চোখে ধূলাে দিয়ে অন্য পথে চলে গিয়েছিল। আমরা যখন তার পলায়নের পথ আবিস্কার করবার জন্যে ঘুরে মরছি সে তত ক্ষণে অধিক্রোশ দূরে একটি পাহাড় পার হয়ে গিয়ে আর J
পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/১০৮
অবয়ব