| ঝিলে জঙ্গলে শিকার। ৭৫ একটি জন্তু মেরে বসে আছে ! কি দুঃসাহস আর ধৃষ্টতা! তাকে সঁপে ফেলবার জন্যে একটি মহিষ বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। একজন শিকারী তাকে জল খাওয়াতে গিয়ে দেখে তার ইহজীবনে সব তৃষ্ণা মিটেছে; বাঘ তার ঘাড় মটকে রক্তপান করে কিছু দূর পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেছে তখনও তার ঘাড় বয়ে রক্ত ঝরছে। একজন শিকারী বাঘের পায়ের চিহ্ন ধরে যেখানে মহিষ বাঁধা ছিল সেইখানে নিয়ে আমাদের উপস্থিত করলে। চারিদিকের পাহাড় জঙ্গল পেটান হল কিন্তু সুফল পাওয়া গেল না ; আবিষ্কার হল যে হত্যাকাণ্ড সমাধা করে বাদ্র মহাশয় আর সেখানে প্রতীক্ষা করেন নি, অগ্রসর হয়ে গেছেন। সেদিনটি দিব্যি ঠাণ্ডা ছিল, দীর্ঘ ভ্রমণের অনুকূল আগেও যে ধরা পড়তে পড়তে তিনি বেঁচে গেছেন তার কারণ তাঁর কৃশকায়া। সেদিন 'শকার আমরা একটি প্রকাণ্ড সম্বর লাভ করিয়াছিলাম। সে পাহাড়ের গা বেয়ে দৌড়ে উপরে উঠছিল , আমার '৪৫০ নম্বরের কর্ডাইট গুলিতে মেরুদণ্ডে আঘাত পেয়ে সে গড়িয়ে নীচে নালায় পড়ে গেল। তার শরীরের চামড়া • নানা দাগে পরিপূর্ণ, একেবারে ক্ষতবিক্ষত। তবে আমাদের সৌভাগ্যবশতঃ সুন্দর শৃঙ্গযুগল সম্পূর্ণ অক্ষত ছিল। সেবারের মাত্রা যথাসম্ভবু সার্থক হয়ে ছিল। ব্যাস্ত্র, ভল্লক, সম্বর আমার লভ্য হয়ে ছিল। তাছাড়া বিশ কোশ পার্বত্য প্রথের অনেক জ্ঞান অর্জন করেছিলাম। পরে এই বিজ্ঞতর সাহায্যে মুগয়ার ক্ষেত্র মনােনীত করবাব সুবিধা ঘটে ছিল। যে সকল বন্ধু • ফয়েছিল ৮৪ সাময়িক বলতে পার, কিন্তু তাদের নইলে শিকারে সে সময়ে কিম্বা ভবিষ্যতে কখনই সিদ্ধি লাভ হত না। আর অরণ্যবিভাগের সেই কর্মচারীর মত বন্ধুলাভ জীবনে সহজে হয় না। বিপদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পরিচয়ে তার সম্বন্ধে মনে তাচ্ছিল্যের সঞ্চার হয়। বিপদের অংশীদার, দুঃখের সরিকের সঙ্গে মনে প্রতিবন্ধন যেমন দৃঢ় হয় এমন আর কিছুতে হয় না। তােমার সাথী সঙ্গীদের সঙ্গে সমভাবে যদি আরাম ভােগ করে নাও তাহলে, শুধু মৃগয়যাত্ৰা কেন, যেখানেই যাও না কেন আনন্দের আর আরামের কিছুরই কোন অভাব কখনও হবে না। | অরণ্যবিভাগের কর্মচারীর মনে পাদুকা সম্বন্ধে চটির শ্রেষ্ঠত্ব কেমন করে অধিকার স্থাপন করে ছিল সে কথা না বলে আজকার কাহিনী শেষ করা যায় না। তিনি চুপচাপ একটা গাছের কাছে দাড়িয়েছিলেন। কোনও শার্দল প্রবরের সে পথে আসবার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা ছিল না, কেননা শিকারের সব চেয়ে সুবিধাজনক জায়গাগুলি তার প্রভু ও তদীয় বন্ধুবর্গ অধিকার করেছিলেন। এমন সময় স্বপ্নদৃষ্ট দৃশ্যের মত অতি সুস্পষ্ট গতিতে, শান্ত পদক্ষেপে শার্দূলরাজ এসে একেবারে তার সম্মুখে আবির্ভাব হলেন! এ যেন বিনা মেঘে বজ্রাঘাত! বিধামাত্র না করে পৃষ্ঠভঙ্গ দিয়ে এক দৌড়ে তিনি নিকটবর্তী গাছের কাছে উপস্থিত হলেন। চটিজোড়া পা থেকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে এক লাফে তিনি গাছে চড়ে বসলেন। মুহূৰ্ত্তমাত্র বিলম্ব হলে এ কাহিনী আর তাকে বলতে হত না, কেননা ব্যাঘ্রবীরও পশ্চাদ্ধাবন করে তাঁর ঘাড়ে পড়বার মতলবে লাফিয়ে উঠেছিল। আর একবার অরণ্যপ্রহরীদের সঙ্গে নিয়ে পাৰ্ব্বত্য বন্য প্রদেশের মধ্যে দিয়ে চলেছেন, বিপদেয় কোন সম্ভাবনার সন্দেহ মাত্রও মনে উদয় হয়নি। হঠাৎ একটা চাপা হুঙ্কার শুনে সদলবলে স্থির হয়ে দাঁড়ালেন,দেখলেন প্রায় ষাট হাত দূরে একটা বাঘ দিবা দ্বিপ্রহরে সদ্যোনিহত সম্বয়মাংস আস্বাদনে তৎপর। তখনও বণের ভঙ্গীতে বসে আছে। সে মুহূর্থে ইনস্পেক্টার দেখলেন যে সে অধীর ভাবে লাজুল আক্ষেপ }
পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/১০৯
অবয়ব