ঝিলে জঙ্গলে শিকার। ৭৯ ।। 1 যেতে হয়। অবশ্য পাখীর ঝাঁকটা উড়ে কোন দিকে গেল আগে সেটা ঠিক করে রাখা আবশ্যক। কতকগুলাে পাখী আবার অত্যন্ত কাছে থাকে। হঠাৎ উড়ে উঠে তােমাকে চমকে দেয়, ফলে প্রাণ নিয়ে পলায়ন করে। ঘুরে বসে তাদের মারবার চেষ্টা করা সব সময় নিরাপদ নয়। ছােট মাছ ধরা নৌকা হঠাৎ উল্টে যাবার সম্ভাবনা অধিক। তা যদি হয় তবে গভীর বিলে বিপদ ঘটা বিচিত্র নয়। একজন বন্ধু আমাকে একবার একখানি নৌকা উপহার দিয়েছিলেন। সেখানি খাট দাড় দিয়ে বাইতে হয়। আমি তার তলাটা দুধারে সমান করে দাড় বাইবার আর লগি চালাবার দুই ব্যবস্থা করে, বসবার জায়গা লাগিয়ে নিয়েছিলাম। যারা এ বিষয়ে বােঝেন তারা বলেছিলেন, হাঁস শিকারের পক্ষে নৌকাখানি নিরাপদ। সেই স্মরণীয় দিনে আমাদের বিলে অনেক হাঁস আয় লালসের এসে জমা হয়েছিল। বিলটি লম্বা চওড়ায় দু ক্রোশ। চারিদিকে তার পদ্মফুলের পাড় আয় শরবনের অচল। এই নুতন নৌকায় এক দিন আগাছ য় ঘেরা গলিপথ পেরিয়ে আমরা স্ফটিকস্বচ্ছ জলের মধ্যে দিয়ে পাখীর মত সহজ স্বচ্ছন গতিতে যেন উড়ে চলেছিলাম। বন্দুক আমার হাঁটুর উপর শুয়ে বিশ্রাম করছিল। চারশাে হাত গেছি ঘােধ হয়, কিন্তু জানিনে কেন, হয়ত বা সব শিকারীরাই একটু কুসংস্কাপন্ন,-যাই হোক আর যে কারণেই হােক, কিছুক্ষণ পরেই আমার মনে হল বিপদ সম্মুখে। যদিও এ আশঙ্কাকে আমি প্রশ্রয় দিইনি তবুও কিছুতেই সে মনােভাব দুর করতে পারলাম না, বরং ক্রমশঃই বেড়ে চলল। তাই মাঝিকে আমি ফিরবার হুকুম দিলাম। আগাছার মধ্যে দু চারটা করে অনেকগুলি স্নাইপ মারলাম। ডাঙ্গা প্রায় দুশ হাত দূরে। আমরা সানন্দে সত্বরগতিতে এগিয়ে চলেছি। একটা চলন্ত দ্বীপের পাশ দিয়ে যাচ্ছি, এমন সময় একটা স্নাইপ আমার ডান হাতের দিক থেকে উঠে, পিছনের দিকে উড়ে চলল। অমি ঘুরে বসে গুলি মারলাম, পর মুহুর্তেই জলে পড়ে প্রাণপণ চেষ্টায় প্রাণরক্ষার জন্যে সাঁতার দিতে হল। ফিরে দেখি মাঝিকেও তাই করতে হয়েছে। “সাধের তরণী” কোথায় অন্তর্ধান হয়েছে তার ঠিক নেই। চারিদিকে কেবল তার গতজীবনের সাক্ষস্বরূপ কতকগুলি মৃত স্নাইপ মাত্র ভেসে বেড়াচ্ছে। শিকারের ভারী জুতো পায়ে সেই আগাছার মধ্য দিয়ে সাঁতার কেটে চলা হতাশের আক্ষেপে পরিণত হবে বলেই মনে হচ্ছিল। আমি তবু আমার আহেল বিলাতী নূতন Holland and Holland'এর লম্বা নল বন্দুক অাঁকড়ে চলেই ছিলাম। কিছু দূরে কাদায় পােতা লম্বা লগিটার কাছে যদি কোন মতে পৌঁছতে পারি তারি চেষ্টায় ছিলাম। তখন আমার অবস্থা “শ্রান্তি আসে জীবন ব্যাপিয়া”। এই লগিগুলিতে ঞ্জাল শুকুতে দেওয়া হয়, কাদার মধ্যে খুব গভীর ভাবে পোতা থাকে। কোনরূপে এরি একটীর কাছে পৌঁছতে পারলে জীবন নিরাপদ হবার সম্ভাবনা। যদিও এ সম্ভাবনা ক্রমশঃই হ্রাস হয়ে আসছিল, তবু আমি বিচলিত হইনি। ইতিমধ্যে আবার অামার দক্ষিণ চরণখানি আগাছার মধ্যে আটকে গিয়েছিল। আমার নৌকার মাঝিটির অবস্থা যে আমার চেয়ে কিছু সুবিধাজন হয়েছিল তা নয়। যদিও তার ডাের কৌপীন ছাড়া দ্বিতীয় পরিধেয় ছিল না। আর আমার বিলাতী বুট ও শিকারীর দুর্ভর পরিচ্ছদ, সহজে গা ছাড়া করা কঠিন। তবু মাঝি বেশী জড়িয়ে পড়েছিল। সেই অবশেষে ডুব জুল কি না দেখতে গিয়ে আবিষ্কার হল মাটী লাগাল পেতে পায়ে, জল তার নাক বরাবর আসে। সে চীৎকার করে আমাকে তার অবস্থা জানালে। হাত দশেক দুরে শুধু তার মুখখানা টোপা পাশার মত ভা ছিল। মরি বাঁচি অবস্থায় কোন মতে আমি তার কাছে গিয়ে পৌছলাম। দুঃখের দোসর হুজনায় কিছুক্ষণ সেখানে সেই ভাবে • । ন
পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/১১৫
অবয়ব