ঝিলে জঙ্গলে শিকার চৈত্রের শেষে আসামে বাঘ শিকার করতে গিয়ে অনেক সময় বেশ এক ঝাঁক আইন নারী। চলত। হাতীগুলি যখন বিক্ষিপ্ত ভাবে আঁকা বাঁকা পথে দীর্ঘ ঘাসের মধ্য দিয়ে যেত তখন এই জাতীয় পাখী চারিদিক হতে উড়ে উঠত; শিকারীদেরও অবাধে গুলি চালায় সুযােগ ঘটত। আমি বাংলা দেশের নামাল জমিতেও এই সময়ে গাইপের দেখা পেয়েছি। একবার নববর্ষে হালখাতার সময় ট্রেণ যখন খালের পাশ দিয়ে চলছিল তখন শুনা আর শিলিগুড়ির মাঝপথেও এদের সঙ্গে দেখা হয়েছে। আমাদের নিজ বাসভূমে”, হরিপুরে, যিলের ৩ মাসের মধ্যেও এ সময় দু এক জোড়ার দেখা পাওয়া যায়। মােহনলাল হস্তীপ্রবর খাট পথে যাবার জন্যে বিলের শুকনা ডাঙ্গার উপর দিয়ে চলেছিল। হঠাৎ গাইপের ডানার শীষ দেওয়ার মত শব্দ আমার মন আকর্ষণ করলে ; চেয়ে দেখলাম এক জোড়া বেশ হৃষ্টপুষ্ট স্নাইপ অন্য দিক দিয়ে উড়ে পালাচ্ছে। সেই পথে পর বৎসর যাবার সময় ঠিক সেইখানটিতে স্নাইপ সন্ধান করতে গিয়ে আবার এক জোড়া আবিষ্কার হল। এৱা সেই গঙ্গ বৎসরের পরিচিত দম্পতি কিনা কে বলতে পারে? বাংলা দেশের চারিদিকে অনেক সুবৃহৎ পুষ্করিণী দেখা যায়। এর এক একটীয় বিস্তার পাঁচ সাত বিঘা জমির বেশী হবে ত কম নয়। গ্রামের বাহিরে বিল ও জলাভূমির সুবিধা নিয়ে কোন্ সত্যযুগে ক্ষেতে জন্ম দেবার জন্যে এগুলি কাটা হয়েছিল। এখন আর কেউ তাদের সংস্কায়াদি করে , পানায় আর ঘাসে ভরে উঠছে, গােচারণ-ভূমিতে পরিণত হয়েছে। এরি নিভৃত নিরালায় নিরাপদ আশ্রয়ে গাইপের সুখে বসবাস করে। দু এক গুলি করলেই ঝাকে ঝাকে উড়ে উঠে জলের মধ্যে পড়ে অন্তর্ধান হয়। তখন তাদের তাড়িয়ে বার করবার একমাত্র উপায় হচ্ছে লম্বা একটা দড়ি দুধার হতে জলের উপর দিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়া। যদিও এটা সদুপায় বলা চলে না, কেন না আশানুরূপ ফল লাভ হয় না। | যদি পাখীদের বিশেষ করে পরিচয় নেবার সুযােগ নাও ঘটে, তাহলে তারা কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেয় দেখতে পেলে তাদের বসত বাটীর সন্ধান করা কঠিন হয় না। ভাদ্র মাসে বিশেষ করে তাদের কখনাে ফসল-কাটা ক্ষেতে কখনো পতিত জমিতে মাঝে মাঝে পাটের চাষের কিনারায় দেখা যায়। প্রায়ই যখন দেখা যায় মাথার উপর ঝাঁকে ঝাঁকে শকুন চিল উড়ে বেড়াচ্ছে তখন বুঝতে হৰে তার মধ্যে কিছু কিন্তু আছে, সেখানে প্রায়ই মনের মত শিকারের খােজ মেলে। শকুন চিল কিন্তু বড় উৎপাত করে, ওৎ পেতে থাকে, মরা কিম্বা আহত পাখীটিকে ছোঁ মেরে নিয়ে পলায়ন করে। মাঝে মাঝে যখন একটু অধিক অনধিকার চর্চা করে বসে, তখন তাদের শাস্তি না দিলে চলেনা। চিল যে কি রকম কাঠ-প্রাণী পাখী তা না দেখলে বিশ্বাস করা সহজ নয়। এই রকম একটী চিলকে কোন রবিবারে চৌৰ্য্য কাৰ্য্যে বমাল ধরে সাজা দিয়ে ছিলাম, তার ডানা ভাঙা যায়, গায়েও আঘাত পেয়েছিল। তাই একজন শিকারীকে তার ভবযন্ত্রণ মুক্ত করে দিতে বলি। শিকারী তাকে এক ডাণ্ডা মেরে ফেলে এসেছিল। মনে করে ছিল বুঝি কাজ হাসিল হয়েছে। পরের রবিবারে সেই পথে যেতে দেখলাম সে তখনও বেঁচে আছে, যদিও মুমষু অবস্থায়। কেমন করে অনাহারে অতদিন জীবন ধারণ করেছিল সে রহস্য এখনও ভেদ করতে পারিনি। একদিনে অনায়াসে অনেক • পাইপ মারা কঠিন নয় কিন্তু দুই কি তিন কুড়ির অধিক হত্যা করা অন্যায় মনে করি। প্রায় বিশ বৎসর ধরে আমি আর আমার একজন বন্ধু একই বিলে আর জলাভূমিতে শিকার করে আসছি।
পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/১১৭
অবয়ব