পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/১২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিলে জঙ্গলে শিকার। $ | | } } পথে এত নীচ দিয়ে উড়ে যেত, যে দু এক গুলিতেই অনেক দিনের ই মাংসের অভাব দূর হত। আমি আমাদের ঝিল এই জাতীয় পাখীদের জন্য আশ্রমের মত নিরাপদ করে রেখেছি। নিলেও মারিনে, কাউকে মারতেও দিইনে। কিন্তু তবুও দেখছি বংশ বৃদ্ধি না হয়ে তােপের দিকেই চলেছে। তাই ভাবি এরা উপযুক্ত আহাৰ্য্যের অভাবে দুর্ভিক্ষপীড়িত বলেই মারা পড়ছে। সড়কের মত নিষ্ঠুর বেগুনি রংএর পদ্মপানার অত্যাচারে এ সব জলাভুমিতে পাখীদের খাদ্যোপযােগী গুম কি ওষধি জন্মে না, বরং মারা পড়ে। তাই এই দুর্দশা। | রাজহাঁসও ছিল অনেক, তঁাদের খুজে ফিরে ব্যর্থনােরথ হতে হ’না। লুকিয়ে বসে থেকে ছােট্ট ডিঙ্গী পাঠিয়ে জল নাড়া দিলে তারা কোন পথে উড়ে ওঠে সেই টুকু লক্ষ্য করলেই অভীষ্ট সিদ্ধ হত। পদ্মার চড়ায় ঝাকে ঝাকে গিন্নী ঠাকুনদের যত যেন সিঁড়ি পেতে বসে থাকত আর কী ব্যক্তিরা ভাঙ্গা গলায় ব’কে ব’কে ঘুরে বেড়াত। একবার তাদের যাত্রার ধীরগতি দৃষ্টি গগাচর হলে উচু চড়ার নীচুতে গা ঢাকা দিয়ে বসে এত সংখ্যায় সংগ্রহ করে আনতে পারতে যে তােমার শিকারী মন খুসী হয়ে যেত। খাবারের খোঁজে তারা নিশাচরবৃত্তিতে অভ্যস্ত। সেই সময় যখন ধানের ক্ষেতে আহারে নিযুক্ত থাকে, চাদের অনির্দিষ্ট আলােকে শেষ রাতের দিকে অনায়াসেই ধরা পড়ে। আমার এক পিতৃব্যপুত্র 4-Bore বন্দুক দিয়ে এদের ভিড়ের মধ্যে একবার একটা গলিপথ কেটে গিয়েছিলেন, যদিও ব্যুহ রচনাটা জর্মানদের মতই জমাট ছিল। এ কীর্তির পুনরাবৃত্তি আর ঘটতে দিই নি। আমি একবার ফাংনর প্রভাতে পদ্মার উপর দিয়ে প্রায় সহস্রাধিক হাঁসকে ফিকে বেগুনি আকাশের গা বেয়ে নিস্কম্প পক্ষে উড়ে আসতে দেখেছিলাম। সে অপূর্ব দৃত জীবনে কখনাে ভুলতে পারবনা। ফঁাকা খােলা জলাশয়ের উপর দিয়ে রাঙা আঙরাখাপরা লালচেরা যখন দলে দলে ভেসে আসে আর সামান্য বিপদের আশঙ্কায় তেমনি ঝাঁকে ঝাঁকে সরে পড়ে, সে বড় সুদৃশ্য। লাল পাগড়ী পরা এই জাতীয় পাখী ঝকে বড় হয় না। ঘাসে-ঘেরা পদ্মবনে এদের খুঁজে বার করা কঠিন কাজ। শ্বেত-চক্ষু হাস কঠিন-প্রাণ পাখী, শরবনে এদের শিকার করায় যথেষ্ট আমােদ পাওয়া যায়। এরা দুটো কি তিনটে এক সঙ্গে উড়ে ওঠে। আর যখন ঘাসের মাথা গড়িয়ে যায় তখন ডাইনে বাঁয়ে, দুরেই গুলি চালাতে পার। আহত পাখীকে কুড়িয়ে নেবার জন্যে এ দেশে থামবার দরকার হয় না। তােমার জেলে মাঝি র বহু-ফলা মাছধরা কুচ দিয়ে তাদের আটক করৰার আশ্চর্য্য কৌশল জানে। তার সুশিক্ষিত চোখ, জলের উপর সামান্য বুকু কি ঢেউ দে, জলের নীচে পাখীটা কোথায় আছে সহজেই অনুমান করতে পারে। আমি দেখেছি এরা সহজেই বাস বনে লুকান পাখীকে ঠোঁট ধরে টেনে বার করে আনে, ভেসে-চলা পদ্ম কি অন্য জলজ পাতার ফুলে-ওঠা আকৃতি দেখে পাখী যে কোন স্থানে আছে অনায়াসেই অাবিষ্কার করে ফেলে। • | ভারতবর্ষীয় হাঁসদের মধ্যে ত্রিশল দেখতে সব চেয়ে সুন্দর। যখন উড়ে ওঠে আকাশের গায়ে বিলের মত দেখায় বলেই তার নাম বাংলা দেশে প্রচার। নরম মেজাজের পাশী অল্প জলেই খেলতে ভালবাসে-গভীর জলের প্রাণীর বিশেষত্ব তার নেই। যেমনই কঠিন প্রাণ শিকারী হােক না কেন এ পাখীর রূপে বর্ণমহিমায় অলকা তিলকার বৈচিত্র্যে মুগ্ধ না হয়ে পারে না। তবে এরূপ পাখীটির পলিনীয় নয়। নীল-শীরা পুরুষপাখী (Teal) আর বিশাল এ দুয়ের মধ্যে এর সভার কে যে মালা পাবে এক নজর চেয়ে বােৰা সহজ।

+

| F