ঝিলে জঙ্গলে শিকার। ভাল। কড়া পানীয় তাদেরই ভাল যাদের পণ, বাঁচা নয়, মরা! আর সুয়া নামক তরল দ্রব্যটি পরিশেষে সর্পের মতই দংশন করে। কথায় বলে দুধ দিয়ে সাপ পােৰা, তার পরিণাম ভয়াবহ। আমি বলি প্রাণ বুলি দিয়ে পান না করাই ভাল। অতএব সাবধান! এই বারা প্রবৃত্তি হতে তফাৎ থেক। শিকার ব্যাপারে আমি এতদিন রেল ও বিভিন্ন বিভাগের কর্মচারীদের কাছ হতে সদা সর্বদাই যে সাহায্য ও ভদ্র ব্যবহার পেয়ে আসছি তার জন্যে ধন্যবাদ জ্ঞাপন এখানে অপ্রাসঙ্গিক হবে না। একবার একজন উচ্চপদস্থ কর্মচারী, তিনি নিজে দক্ষ শিকারী,তবু আমি দূর বাংলা দেশ হতে শিকার করতে আসছি শুনে বনবিভাগের শ্রেষ্ঠ স্থানটি আমার জন্যে স্বতন্ত্র করে রেখে ছিলেন। তাঁর এই সৌজন্য আমি কখনাে ভুলতে পারব না। আর একবার স্বদেশ হতে দূরে একজন পুলিশ কর্মচারী প্রবাসে, বাংলা মুলক হতে শিকার করতে গেছি জেনে,অনাহুত অনেক সাহায্যের প্রস্তাব করে পাঠিয়ে ছিলেন। সে কথাও আমার মনে গাঁথা আছে। আমার মনের অতলে যেমন চতুর ডুবুরি নামাও না কেন বন বিভাগের কর্মচারীদের আতিথ্যের জন্যে আমার গভীর অশেষ কৃতজ্ঞতার মাপ জোক সে কখনই করতে পারবে না। আমার এ কৃতজ্ঞতা একেবারে অফুরন্ত, খুলে দেখান যায় না বলে বােঝান অসম্ভব মধ্য প্রদেশের একজন সামন্ত রাজা তার অপূর্ব সুন্দর বনস্থলীতে আমাকে স্বেচ্ছা বিচরণের অধিকার দিয়ে যে বদান্যতার পরিচয় দিয়েছেন তাও চিরস্মরণীয়। আসামের অপর একজন সাম নৃপতির সহৃদয় আতিথ্যের গুণে আমি শিকারের বহুতর গৌরব নিদর্শনে আমার গৃহখানি সাজাতে পেরেছি, এ সুযােগ না পেলে তা আমার ভাগ্যে ঘটত না। তিনি নিজে অতি নিপুণ শিকারী তাই আমার মনের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে তাঁর সহানুভুতি এমন সহজ ও সুন্দররূপে আত্ম প্রকাশ করেছিল। . ৩শে জুন ১৯১৮ আদরের ছেলে মেয়ে, প্রায় এক বৎসর হয়ে গেল এই চিঠি গুলি আমি লিখতে আরম্ভ করে ছিলাম। করুণা এখন ডাগর হয়ে উঠেছে, জুলুমবাজ কালিপ্রসাদও জানান দিতে সুরু করেছে যে সেও একটা মানুষ, তাকে আর পিছে ফেলে রাখা চলবে না। সে এখন বাঘ ও চিতা, কৃষ্ণ-সার ও সাঘর, বাইসন ও মহিষের তফাৎ বেশ বুঝতে পারে। তাই বাকী কথা গুলি চার জনেরই উদ্দেশে বলে, এখনকার মত চিঠি লেখা বন্ধ করব। মুহূর্তের জন্য যদি একটিবার অমর কবি কালিদাসের বনস্থলী-বর্ণনার মধ্যে ফিরে যাবার অবসর হয়, এমন প্রতি ছত্রে তার আশ্চর্য লক্ষ্য করবার ক্ষমতা ও লিপিকৌশল দেখে মুগ্ধ ও বিস্মিত না হয়ে পারা যায় না! কি চারু গ্রীবা ভঙ্গে ফিরে ফিরে চায় । একদৃষ্টে মুহুর্মুহু রথটার বাগে;
- জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর কৃত অভিজ্ঞান শকুন্তলার বঙ্গানুবাদ।