বিলে জঙ্গলে শিকার। দেখলাম এ প্রলােভন এড়াতে পারলে না। যেদিন আমি পোঁছেছি সেই দিন সকালেই সে এ মৃগয়ারীতি বিরুদ্ধ কাজটি করলে। ভাল করে ভাের হবার আগেই বনের পথে সে বাঘের পায়ের দাগ খুজতে গিয়েছিল। কথাছিল খোজ খবর করে ব্যাবীর কোথায় শিবির স্থাপন করেছেন তার সংবাদ নিয়ে আসৰে। একটা মহুয়া গাছের ছায়ায়, বােপের আড়ালে শিকারীর সেকেলে বন্দুকটি, একখানি গামছা, রক্তের জুলি, আর তার থে তােন অর্ধেক খাওয়া শরীরটা পাওয়া গেল! পরে অামরা জালাম, এ ভীষণ হত্যাকাণ্ড, একটি মানুষ খাওয়া বাঘিনী আর তার তরুণ বংশধরেরা করেছে। খুব সম্ভবতঃ শিকারী একটি চিত্তলের, অর্থাৎ গুলবাহার ( Spotted deer) হরিণের, আশায় সেইখানটিতে লুকিয়ে বসেছিল। মতলব যদি দেখা হয় তবে সেটিকে মেরে আবে। ইতিমধ্যে বাঘিনী এসে তাকেই শিকার করে ফেলে। সে অঞ্চলে যতগুলি বাঘ ও বাঘিনী এসে বসন্ত করেছিল, তারা সবাই মহামাংসের পক্ষপাতী। মৃগমাংসেও তাদের অরুচি ছিল না। কাজেই মানুষটিকে আগে পেয়ে তাকে আর ছেড়ে কথা কইল না। এসব শিকারীরা যেমন নির্বিচাবে বনরাজ্যে জীব হিংসা করে বেড়ায়, মনে হয় বনের অধিষ্ঠাত্রী দেব এর প্রাণ নিয়ে তারই প্রতিশােধ তুললেন। নরমাংস আর মৃগমাংস লােভী বাঘেদের কথা বলতে গেলে বলা উচিত, তারা ভিন্ন গােত্রীয় হলেও এক জাতীয়। তাদের বিপুল শরীর, দৈর্ঘ্যে দশ ফুটের কিছু উপর (রােলা সাহেবের পরিমাণ রীতি অনুসারে)।, শস্যশ্যামলা বঙ্গমাতা তাদের নামকরণ করেছেন, “বাঙ্গলার ব্যারাজ”! বঙ্গভূমির জল বাতাসের গুণে তাদের বরংপু শুধু দৈর্ঘ্যে নয়, আয়তনেও বৃদ্ধি পায়। তাই তারা দেখতে সহরের কাঙ্গাল কেরাণীদের মত নয়। মফস্বলের মহিমান্বিত জমিদার ও রাজা রাজড়ার মত,মদমাসবহুল। চাল চলনও বিশেষ গম্ভীর রকমের। কিন্তু যে সব বাঘ শিকারের সন্ধানে শুধু মাঠে বনে নয়, পাহাড়ে আর পাহাড়তলীতে চলাফেরা করে, তাদের দেহ ক্ষিপ্রগতি-রাজপুত বীরের মত দীর্ঘকায়, বসামাংসবৰ্জিত, অস্থিমজ্জার সাম্যে দেখতে সুঠাম, সুন্দর। তারা চতুর সতর্ক, দ্রুতগতি ; সহসা তাদের শিকার করা কঠিন। কিন্তু ব্ৰহ্মপুত্রের উপত্যকায় ফাল্গুন চৈত্রে কিম্বা তার কিছু পূৰ্বেই,যখন নদীতীর আর বনভূমি মরকতশ্যামল তৃণে সুসজ্জিত হয়, বাথানের মহিষের দল সেখানে স্বেচ্ছায় স্বচ্ছন্দে আহার বিহার করে দিব্য হৃষ্টপুষ্ট হয়ে ওঠে,তখন তাদের শিকার করে করে ব্যাঙ বীরেরাও শাই “বৃঢ়োর শালপ্রাংশু মহাভুজ হয়ে ওঠে। তখন তাদের দিগ্বিজয়ী অশ্বমেধ যজ্ঞকারী রঘুরাজ বলে ভ্রম হওয়া বিচিত্র নয়। পাহাড়ের দেশে ব্যাঘ্রের ভাগ্যে পশু লাভ সহজ ব্যাপার নয় ; অনেক পরিশ্রমই করতে হয়, হরিণ শূকর ভারি চতুর, পারত পক্ষে ধরা দেয় না। দিন গুজরান করতে মেহন্নত দরকার। তাই প্রণিধারণ শুধু চলে, ভুড়িটি গড়ে তােলা আর হয়ে ওঠে না। কাজেই নতুন কার্যক্ষেত্র খুঁজে নিতে হয়। এদের সম্বন্ধে যা বল্লাম চিতা ও নেকড়েদের বিষয়ও সেই কথা বলা চলে। এই রকম ব্যারাজদম্পতি যেখানে রাজত্ব করে সেখানে অন্য কেউ আর অনধিকার চর্চা করতে আসে না; তারা ভিন্ন রাজ্য অধিকারের চেষ্টায় দূরে যায়। এ ছাড়া আরও এক কারণ আছে। যে রাজ্য কোন এক ব্যাদম্পতি অধিকার করে থাকে, সেখানকার পশুপ্রজা আত্মরক্ষা সম্বন্ধে বিশেষ সাবধান হয়ে ওঠে। কাজেই সেখানে মৃগয়ার সুবিধা বড় একটা ঘটে ওঠে না। সেখানে থাকলে রাজার যুদ্ধ হতে পারে। কিন্তু উলুখড়ের প্রাণ যায় না, পেটও ভরে না। তাই স্বার্থ সাধন করবার জন্যে স্বতন্ত্র দেশই শ্রেয়। এ ছাড়া দেশ বিশেষে এই সব জন্তু বাস করতে একটু ভালবাসে। তােমাদের মনে আছে বােধ হয়, আমাদের
পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/১৯
অবয়ব