১৪ ঝিলে জঙ্গলে শিকার। হরিপুরের কাছাকাছি চলে তিন তিনটা চিকা তিন মাসের মধ্যে উপরি উপরি আমার গুলিতে মারা পড়েছিল। এদের স্ত্রী পুরুষের প্রভেদ আয়তনে এবং চতুরতায়। মেয়েরা চালাক বেশী। এমনি করে বােধ হয় তারা গায়ের জোয়ের অভাবটা পূরিয়ে নেয়। তা নইলে স্ত্রী জাতিকে খাট করে কোন কথা বলি, এমন সাধ্যি আমার নেই। অলকমণি ! তোমার এ বিষয়ে ভীত হবার কিছু নেই। না র তােমার পতি দেবতাকে এইটুকু পড়ে শুনিয়াে না, তাহলেই কোন গােল হবে না। সন্তান পালন আ য়ক্ষণের জন্যেও বাধিনীকে নেক সময় বেশী সতর্ক হতে হয়। কেননা বাপেদের গ্রাস হতে তা পেটের ছেলেদের রক্ষা করবার জন্যে অনেক বুদ্ধি খরচ, অনেক ফন্দী আঁটা দরকার হয়। শুধু তাই নয়ু, এই সময়ে তার ছেলেদের আর আপনার ভরণ পােষণের ভার নিজেকে না নিলে চলে না। যিনি জন্মদাতা তিনি কিছুই করেন না; উল্টে ছেলেগুলিকে কেন করে মারবেন সেই মতলবে ফেরেন। ছেলেগুলি কিছু বড় শক্ত হয়ে যখন আত্মরক্ষা করতে পারে, তখনই তাদের মায়ের ভাবনা যায়। তােম। সবাই জান বােধ হয় বেড়ালের মত বাঘেরাও সুবিধা পেলেই ছানাদের খেয়ে ফেলে। তাই মারা অনাহারে অনিদ্রায় রাতদিন প্রাণপণ করে পাহারা দিয়ে থাকে। একবার আমি মস্ত একটা বাঘের সন্ধানে ফিরছিলাম। কিছুতেই আর নাগাল পাইনে। তারপর সাবালক পুত্রহত্যা পাপের বমাল সাক্ষীতেই সে বাধা পড়ল। খামের কোন লােক এক দিন ভাের হবার কিছু আগেই তার বাড়ীর কাছে বাঘের ডাক শুনে জেগে ওঠে। তার বাড়ীখানি গ্রামের এক টেরে, বনের কাছাকাছি ছিল। শেষ রাতে উএল চাদের আলােতে সে দেখলো দুটি মন্তু চিত। মাঠের উপর খেলা করছে। হঠাৎ ভয়ানক গর্জন গুনতে পেয়ে বেরিয়ে দেখে ফি, দুয়ের মধ্যে যে বয়সে বড়, আকারে আয়তনে বােঝা গেল সে পুরুষ ; অন্যটির উপর ঝাপিয়ে পড়ল, আর কুকুরে যেমন ইদুরকে নাকড়ানি দিয়ে টান মেরে ছুড়ে ফেলে দেয়, তেমনি তাকেও ছুড়ে ফেলে দিলে। বেচারী জলে ভরা একটা নালার মধ্যে গিয়ে পড়ল। করুণাময় পিতা আর তার খোঁজ খবর নেওয়া দরকার বােধ করলেন না, সে পড়েই রইল। এ খবর রাত্র ভােরে আমার কাছে পৌছল। কাজেই এর পরে তাকে খুঁজে বার করা আমার পক্ষে কিছুই কঠিন হল না। এই ক'দিন ধরে ব্যাত্ৰ বীরের তল্লাশে আমাকে ভারি হয়রান হতে হয়েছিল, কিন্তু বাচ্ছাটি মায়ে কাছে একটুখানি আদরের চেষ্টায় গিয়েছিল। বাবা মশায়ে বুকে আর সেটুকু সই না--পুরুষ ব্যাঞ্জ এলবাসার স্থলে কারাে আধিপত্য সইতে পারে না—এমন কি নিজের পুলেরও নয় ! তােমা মনে কোন বাৰ কিম্বা চিতা জলের ঘেষ নিতে চায় না সচরাচর তারা জলে পা দিতে তা না সত্য ; তষে দরকার হলে স্রোতে গা ভাসাতে আপত্তি কিম্বা অনিচ্ছা দেখায় না। আমার বন্ধুবৰ্গদেহ সকলেরি সঙ্গে তোমরা বিশেষ পরিচিত—আমায় বলেছেন আসামে, শ্রীহট্টে, বাব শিকারের সময় তারা দেখে এরা সাঁতার দিয়ে বড় বড় খাল বিল বেশ পার হয়ে যায়। একবার , একটা বাঘ দেখে তার অনুসরণ করে যেতে হঠাৎ দেখলেন সে যেন ধোঁয়ায় মত কোথায় মিলিয়ে গেল। তাষ আচহ্নমাত্র দেখা গেল না। মুখে খর্ব ঘাসে ঢাকা মাঠ ; তার চারিদিকে হাতীর উপর শিকারী। এর মধ্যে কোম যাতে এমন অসাধ্য সাধন ঘটল, কারো বােধগম্যই হল না। ক্রমে আবিষ্কার হ’ল ঠেম এক বা একটি খাল; বাঘটি টুপ করে তারি জলে নেমে শুধু মাথাটি জলের উপর দিয়ে
পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/২০
অবয়ব