১৪ ঝিলে জঙ্গলে শিকার দশফুট লম্বা একটা বাঘ শিকার করি। জঙ্গল হতে তঁবুতে বয়ে নিয়ে আসা, এই সময় টুকুর মধ্যে পাঁচ ছয় ইঞ্চি কমে গিয়েছিল। এতে আমার বন্ধুদের ভারি আমােদ বােধ হয়েছিল। বলে রাখা ভাল সে দিন তাদের ভাগ্যে কোন শিকারই জোটেনি! মৃত্যুর পর সব জন্তুর শরীরই কঠিন হয়ে পড়ে। তবে বাঘেদের দেহে এই কাঠিন্য যত নম্র দেখা দেয় অন্য পশুর শরীরে তা হয় না। চামড়া ছাড়িয়ে নিলে বাঘটা যে কত বড় ছিল তার কোন খবরই পাওয়া যায় না। প্রকৃতি মাতা এ জাতীয় জন্তুদের যে পােষাকটি পরিয়ে দেন, তা তাদের দেহে এটে বসে না, আগা থাকে। এর কারণ এদের দেহে যে ক্ষত হয়, সেটা চামড়াতেই আটক থাকে, মাংসে গিয়ে না পৌছায়—তা হলে প্রাণহানির সম্ভাবনা অধিক। এদের গায়ে আঘাত-ক্ষত সৰ্ব্বদাই হচ্ছে। সেটা শক্ত চামড়ার উপর দিয়েই যায়, বেশী সাংঘাতিক না হয়, এই নিয়ত যিপদ নিবারণের জন্যেই প্রকৃতি আচ্ছাদনটি ঢিলে দিয়েছেন। বাঘের চামড়া ছাড়িয়ে নেবার পর দু’ফিট আন্দাজ বেড়ে যায়। চিতাবাঘের এর অর্ধেক বাড়ে। একই দৈর্ঘ্য এবং আয়তনের বাঘ ও চিত। কিন্তু ওজনে সমান হয় না। একটা বড় বাঘের ভারে একখানি বড় শক্ত চারপাই মড় মড় করে ভেঙে পড়তে আমি দেখেছি। চিত। ওজনে একমণ ৩৫ সেয়ের বেশী হতে প্রায় দেখা যায় না। একটা বড় বাঘ কিন্তু সাড়ে সাত মণ পর্যন্ত হতেও পারে। এমনটা যদিও সচরাচর বড় একটা দেখা যায় না। কয়েক বৎসর পূর্বে একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছিল। সেই কথা মনে পড়ে গেল। একটা বাঘের গায়ে গুলি লাগেনি। পালাবার সময় যেখানটি শিকারীরা ঘেরাও করেছিল, সে সেইদিকে ছুটে যেতেই আর সবাই পালিয়ে গাছে উঠে পড়ল। এক বেচারী তাড়াতাড়ি উঠতে না পেরে একটা ঝােপের আড়ালে লুকিয়েছিল। তাকে খুজতে গিয়ে দেখা গেল সে সেইখানটিতে মরে পড়ে আছে;-ঘাড়টি মটকান, নখের কিম্বা দাতের কোন চিহ্ন শরীরের কোথাও ছিল না। পলায়নতৎপর ব্যারাজ হয়ত একবার সন্তর্পণে তার ঘাড়ে হাত রেখেছিলেন !-প্রণয়ীর সলজ্জ প্রথম সম্ভাষণের মত। তাতেই তার এই দশা ; একেবারে “পপাত চ মমার চ”। এ হতেই জন্তুটির ওজন যে কি তা অনুমান করা কঠিন নয়। সামর্থ্য ও নিষ্ঠতায় আর কেউ বাষের সমান না হলেও, এরা কিন্তু বুনো কুকুরকে, ভারি ভয় করে। বনচর জন্তুদের মধ্যে এই কুকুরদের মত ঘৃণ্য স্বভাবের আর কোন পশু নেই। এরা একবার যে বনে এসে দেখা দেয় আর সবাই আতঙ্কে সেখান হতে সুদূরে পলায়ন করে। ব্যারাজও এই “যেন গত স পন্থা’র” অনুসরণ করেন। আর একটা কারণও থাকতে পারে। শিকারই যদি সব পালাল তবে শিকারী আর সেখানে বসে কি করবে বল ? ভালুক আর পাহাড়ে চিত বুনন কুকুরকে তেমন ডরায় না, তার কারণ এরা সহজে গুহাগহ্বরে আশ্রয় নিতে পারে। আমার একবারকার শিকার এদের উপদ্রবে একেবারে মাটা হয়ে গিয়েছিল। বাঘ, সার, অন্য মৃগপা ‘সব কোথায় অন্তর্ধান হয়ে গেল ! আমি পথ চেয়ে চেয়ে বসে যখন ফিরে এলাম তখন শুনলাম তার দু'দিন পরে বাঘ ভল্লুক হরিণ নীলগাই সবাই বাসায় ফিরে এসেছিল। এই বুনন কুকুরের দল ভারি চালাক। এক জায়গায় জড় হয়ে না থেকে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এক এক জন গিয়ে এক একটা পাহাড়ের চূড়ায় ওঠে, আর অন্যরা শিকার তাড়িয়ে তাদের দিকে নিয়ে যায় । সাম্বর হরিণ প্রায়ই এদের ফাদে পড়। কারণ প্রকাণ্ড ডালপালাওয়ালা শিং নিয়ে বনের মধ্যে দিয়ে শীগগির দোড় পালাতে পারে না। এই কুকুসের পালের একটিকে মেরে ফেললেও অার 1 ]।
পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/২৬
অবয়ব