বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৬ বিলে জঙ্গলে শিকার • ছিল তারাও ভিড় করে ঘিরে রয়েছে। আমি আমার বন্দুকটী গেলাপবন্দী করেছি। এমন সময় প্রকাণ্ড এক ভল্লুক-দম্পতির ছপ ছপ, শব্দ কাণে এসে পৌঁছিল ! K. G. B, বন্দুক হাতে এগিয়ে গিয়ে তাদের অভ্যর্থনা করলেন ! স্বাগত সম্ভাষণের মাহাত্ম্যে একটি ত তৎক্ষণাৎ ধরাশায়ী হন! ইহ জীবনের মত তার আর বাক্য নিঃসরণ হয়নি। অন্যটা চারিদিকে লাঠীয়াল শিকারীদের গােলযােগ, বাঘ ভাল্লুক মারা পড়বার বিভ্রাটের সুযােগে পলায়ন দিলে। সুখের বিষয় কারাে কোন হানি করে যায়নি। আমি গেলাপ হতে বন্দুকটা বার করে নেবার দু এক মিনিটের মধ্যেই এতখানি কাণ্ড হয়ে গেল! | আর বেশী দুর না এগিয়ে, এলো মেলাে ভাবে ঘুরে না বেড়িয়ে, এখন কাজের কথায় মন দেওয়া ভাল। বাঘ আর চিতা শিকারের গল্প আমি প্রকৃত ঘটনা হতেই বলব। এ ব্যাপারে যখন সম্ভব, পায়ে হেঁটে শিকার করাই সবচেয়ে নিরাপদ উপায়, এ কথা জোর করে বলতে আমি একটুও দ্বিধা বােধ করছিনে। এ বিষয়ে প্রথম স্থান দিতে হবে Hill Hunting'কে, অর্থাৎ বনে পাহাড়ে ঘুরে ঘুরে শিকার করাকে। এ কাজে প্রচুর অভ্যাস আর অলৌকিক ধৈর্য্যের আবশ্যক। এ ব্যাপারে অনেক সময় দেখা যায় সেটা বিরক্তিজনক লুকোচুরি খেলা ছাড়া আর কিছুই নয়। শিকারী শুধু খুজেই মরে, কিন্তু অভীষ্ট লাভ হয়ত ভাগ্যে সহজে ঘটে না। লম্বা ঘাসে ভরা জঙ্গলে এমনভাবে শিকার করা সম্ভব নয়। পাহাড়ে জায়গায় এ সুযােগ খোজা দরকার, আর সুবিধাও পাওয়া সহজ। বৃহদাকার জন্তুবিশেষকে তার আপন জমিদারীর এলেকায় এ ভাবে হাত করতে পারাই শিকারীর মৃগয়াকৌশলের পরাকাষ্ঠা। যদি মৃগয়ার নিদর্শন, ব্যারাজের ভােরাকটা আঙরাখা, ভালুকের লােমশ কোমল কম্বলখানি, হরিণের শাখা প্রশাখা বিশিষ্ট প্রকাণ্ড শৃঙ্গযুগল, মহিসুরের অৰ্দ্ধচন্দ্রাকৃতি শৃঙ্গফলক, বরাহ অবতারের ঋঙ্গের মত মুগ্নদন্ত, সংগ্রহ করে গৃহের শােভা আর আপনার বীৰ্য গৌরব স্মরণীয় করতে চাও, তাহলে পরিশ্রম করতে হবে, ধৈৰ্য্য চাই। যে মানুষ এগুলি অর্জন করতে চায়, বিনিময়ে তাকে আপন জীবনের অনেকখানি অংশ, আর শ্রেষ্ঠ অংশই, দান করতে হবে। | মধ্যপ্রদেশে অনেক পাহাড়তলী আছে কিন্তু শিকারী সেখানে কমই যায়। কেন না সেখানে সহজ গতিবিধি নাই, সৌখীন চালচলন চলে না। শিকার প্রত্যাশায় মৃত জন্তুর পাশে পাহারা দিয়ে বসে থেকে বিশেষ কিছু সুবিধা হয় না। টোপ গেঁথে মাছ ধরার মত চুপ করে বসে থাকতে হয়। বাঘকে ভুলিয়ে আনবার জন্যে পাটা কি ভেড়া বনে বেঁধে রাখতে হয়। তাকে আকর্ষণ করে আনবার জন্যে এইটা সবচেয়ে ভাল উপায়। আর যদি তার কাছাকাছি কোন জন্তু বাঘের আক্রমণে মারা গিয়ে পড়ে থাকে , আর সেখানে জনসমাগম বিরল হয়, তাহলে বাঘটিকে তার মৃতশিকারের কাছাকাছি নাগাল পাবার খুবই সম্ভাবনা। এই সব মৃত শিকারের কাছে পৌছিবার জন্যে শিকারীর বিশেষ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা থাকা আবশ্যক। কাণে কাণে কথার চেয়ে জোরে কোন কথা বলা চলে না ; আর শিকারী, ও তার অনুচরদের নিশব্দ পদসঞ্চারে যাওয়া আবশ্যক। প্রায়ই দেখা যায় এর কাছাকাছি কাক চীল গাছের ডালে বসে গলা বাড়ির সতৃষ্ণ দৃষ্টিতে সেইদিকে চেয়ে আছে। তােমায় আসতে দেখে শিয়ালগুলাে মনভারী করে নিতান্ত অনিচ্ছায় অন্যত্র সরে পড়ছে। ময়ুরের কেকাধ্বনি, যতক্ষণ বাঘ সেখান হতে অদৃশ্য না কুচ্ছে, ততক্ষণ আর কিছুতেই নীরব হচ্ছে না। এই সব লক্ষণ হতেই বাঘটা যে