২৬ ঝিলে জঙ্গলে শিকার • একটু শব্দ হয়েছিল তাতেই গে ঘাড় ফিরালে। গুলি তার কাণের মধ্য দিয়ে ঘাড়ে গিয়ে লাগল। তৎক্ষণাৎ সে ধূলিলুষ্ঠিত হয়ে পড়ল। দ্বিতীয় গুলি মারবার ভগে আমি প্রস্তুত হচ্ছিলাম, কিন্তু যখন দেখলাম সে আর নড়চড় করলে ন', তখন বন্দুকের যে নল খালি হয়ে গিয়েছিল সেইটি আবার পুরে কি ঘটে দেখবার জন্যে অপেক্ষা করে রইলাম। শিকারীরা কয় জন পাহাড়ের মাথা হতে একটু নেমে আমার ডাইনের দিকে, আর বাকী কয় জন সম্মুখে কিছু দূরে সতর্ক হয়ে দাড়িয়েছিল। যতক্ষণ মৃগয়াভিনয়ের যবনিকা পতন না হয় ততক্ষণ এ সাবধানতা বিশেষ আবশ্যক। জয়গর্ধে-উৎফুল্ল আমি আর স্থির হয়ে থাকতে পারলাম না। সঙ্কেতসূচক বাঁশটি বাজয়ে দিলাম। তখনই চারি দিক হতে জয় জয় শব্দে মহাকোলাহলে সকলে সে সঙ্কেতে মহনন প্রকাশ করলে ও নিকটে এল। K. G. B. আর গোটিয়া দুজনই আমার কাছাকাছি ছিলেন। সবাই এসে ঘিরে দাড়িয়ে ব্যারাজ-পত্নীর রাজযােগ্য অঙ্গাবরণ অর বঙ্গের প্রশংসা করতে লাগলেন। পাহাড়ের মাথার উপর যে সব শিকারীর। ছিল তাদেরই মণ্যে জন কয়েক সময় মত এসে পৌঁছতে পারে নি। সেই সঙ্কট স্থান হতে নেমে আসার জন্যে তারা ব্যাকুল, অথচ ব্যর্থ চেষ্টায় নিথুক্ত ছিল। এই খানেই ২রা সেপ্টম্বরের তল্লক-বিভ্রাট ঘটেছিল। সে কথা তাে তোমরা আগেই শুনেছ। | অবিলম্বে বাঘিনীকে এক পক্ষে, আর ভল্লুকটিকে অপর একটিতে য্যা রচনা করে দিয়ে, বাহকের। সমারােহে শোভাযাত্রা করলে। আমি আর K. G. B. গজাবােহণে আর সেই গৌটিয়া গজ-রাজের পুচ্ছ দেশে লম্বমান হয়ে তাদের অনুসণ করলাম। পথে গ্রামবাসীরা আমাদের সঙ্গ নিলে। মহানন্দে তারা ঢাক ঢোল বাজিয়ে চল। বাদ্যের সঙ্গে নৃত্যও বাদ যায় নি। সংহাররূপিণী শার্পণ বধূর মৃত্যুতে আনন্দ আর পরে না। কাছে গিয়ে দেখলাম বাঘিনীটি কৃশোদরী। তার চামড়া খানি বড়ই সুন্দর। আমার এ বারের হােলির উৎসব বনের মধ্যে নরখাদক ব্যাঘ্রের তপ্ত শেণিতের আবীয় কুঙ্কুলে সুসম্পন্ন হল। আমরা অবিলম্বে এ শুভ সংবাদ দশ (ক্রাশ দুরের তার আপিনের সাহা5্য বীতে, আমাদের নিমন্ত্রণকারীকে ও আৱ আর সমানুভব বন্ধুদের কাছে পাঠিয়ে দিলাম। দেশ-বাহকই আবার সে গুলির উত্তরও নিয়ে এল। তবে বাড়ী আর আমার কৃতজ্ঞ নিমন্ত্রণকারীর কাছ হতে যে আন্তরিক সহানুভূতিপূর্ণ অভিবাদন পেয়েছিলাম, এমন আর কারও কাছে পাই নি। | শিকার করে এমন সুন্দর বাঘছাল যদি লাভ হয় তবে তাকে রক্ষা করবার জন্যে বিশেষ যত্ন করতে হয়। আমরা প্রসিদ্ধ চর্মশােধনকারী Messrs Rowland Ward’এর নিকট এ চামড়া লণ্ডন সহরে পাঠিয়ে দিলাম। তখন জর্মানদের অনুগ্রহে জাহাজ ডুবির অদ্ভাব ছিল না। এর আগে আর পরে যে সব পার্শেল পাঠিয়েছিলাম সব গুলিরই পৌঁছান সংবাদ যথাসময়ে আমার হস্তগত হ’ল, কিন্তু এ চামড়ার অনেক দিন কোন সংবাদ না পাবার পর হদয়বিদারক সংবাদ এল শত্রুপক্ষের বিরুদ্ধাচরণে পার্শে টি হারিয়ে গিয়েছে ! হায়, এমন বিজয় আনন্দের পরিণাম এমন শােকাবহ ; এ ক্ষতিপূরণ হবার উপায় ছিল না—হণ পাশবতাই এই ক্ষতির মুল কারণ ! ।
পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/৪২
অবয়ব