বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৮ ২৮ । বিলে জঙ্গলে শিকার হল ! তবে একেবারে নিশ্চিন্ত হবার ইচ্ছায় একটু এগিয়ে অন্য নলটিও তার উপর খালি করলাম। আমাদের আক্রমণ করবার জন্যে যখন সে উঠে দাঁড়িয়ে গর্জন করছিল সে ভয়ঙ্কর রব দু’শ হাত দূর হতে স্পষ্ট শােনা গিয়েছিল। বিপিন যদি না চেঁচাত (তােমরা তাকে চেন) আমি অনায়াসেই কাৰ্য্য সমাধা করতে পারতাম ; বন্দুকের বা নলের গুলিটাও অনর্থক নষ্ট করতে হত না। সেটা ভােলা থাকত, পরে বিক্ষে দরকারের সময় কাজে লাগাতে পারতাম। বেচারী বিপিন বেয়াকুবী করে ভারি দুঃখিত আর লজ্জিত হয়ে পড়েছিল। একবার শিক্ষা হলে পর আর কখনাে এমন করে নি। বাঘ কিম্বা চিতা যদি খুব নীচু হয়ে চলে কিম্বা ভূয়ে শুয়ে পড়ে তা হলে তুমি যত তীক্ষ্ণদৃষ্টিই হওনা কেন সহজে তাকে খুজে পাবে না। মনে রেখো, তার নিজের মনােনীত স্থানে, তােমার তাকে খুজতে হয়। খোলা জায়গায় রক্তের ধারা কিম্বা পায়ের চিহ্ন দেখে কখনাে আহত জন্তুকে অনুসরণ করা উচিত নয়। অনেক অনুচর সহচর সঙ্গে থাকলেও এটা করা অবিবেচনার কাজ। বন্দুক ঘাড়ে, কুচকরা সেপাহীর মত দলবদ্ধ হয়েও এ কাজে অগ্রসর হওয়া অন্যায়। এ ভাবে অনেকবার অনেক বিপদ ঘটতে শােনা গিয়েছে। কারণ আহত প্রস্তুটি যে কোন পথে, কি ভাবে কখন এসে পড়ে, তার নিশ্চয়তা থাকে না। যদি চারি দিক নিঃশব্দ হয়, বাক্যালাপ একেবারে নিষিদ্ধ হয় তাহলে অধিকাংশ স্থলেই দেখা যায় আহত ও নিকটেই অণশগ ওহণ করেছে, আর কিছুক্ষণ যদি অপেক্ষা কর তাহলে দেখবে হয় সে মৃত, নয় এত দুর্বল ও অক্ষম হয়ে পড়েছে যে নির্বিঘ্নে অবাপে তার কাছে এগিয়ে যেতে পার। Nemo nic lacesit--আমায় একা থাকতে দাও—“ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি” ভাবটাই তার মনে তখন প্রবল হয়। তাই অকারণে উত্যক্ত বোধ ককূলে, সম্ভবতঃ আক্রমণকারীর উপর প্রতিশোধ তুলবার চেষ্টা করে। এ সব সময় আমি কি করি জান ? প্রথমে শিকারী ও অনুচরবর্গের একটা মন্ত্রণা সভা হয়, তার পর ঢাকার মত গোল পণে তাদের অনুসন্ধানে পাঠিয়ে দিই। প্রথমে তারা দেখে অসে কভ দূরে সে গিয়েছে, তার পর ক্রমে এই গোল পথটী খাট করতে করতে আসি। যদি পথে বেতবনের বাধা পড়ে, তা হলে বনের মধ্য হতে তাকে বার করে নিয়ে আসবার জন্যে দু একটা হাতী থাকলে কাজটা সহজ হয়। হাতীর অভাবে শিকারীদের দাবদ্ধ করে হাতে মস্ত মস্ত এক একটা বাঁশ দিয়ে পাঠান ভাল। দূর হতে খাশের খোচায় তারা বেতবন হতে বাঘকে বার করে নিয়ে আতে পারে। পাহাড়ে জায়গায় নালার মধ্যে এক দল মোয তাড়িয়ে পাঠান সব চেয়ে নিরাপদ পন্থা। এ অবস্থায় নালা কিম্বা নদীর পারে পারে নিজে বন্দুক ঘাড়ে খুজতে যাওয়া আত্মহত্যারি সামিল। এমন করে কত জনের যে কত বিপদ ঘটেছে সে কথা আর বাবার নয়। পাথরের ঢিবির পিছনে ঝােপঝাড়ের মধ্যে যে জন্তু লুকিয়ে বসে আছে, সে তােমার গন্ধ পায় আর তোমার পদশব্দ ভাল করে শোনে।। সে ৰিজে মস্ত শিকারী। একটু শব্দ হতে না হতে সেই দিকে ফিরে দেখে। এ বিষয় তুমি নিজে পরখ করে নিতে পার। তােমার কুকুরকে মার দে আরাে-শাস্তির হাত এড়াবার জন্যে টেবিল কিম্বা কোচের নীচে গিয়ে আশ্রয় নেবে। তার পর তুমি যত নিঃশব্দে আস্তে আস্তে পা ফেলে তার দিকে যাবার চেষ্টা করবে দেখবে সে তৎক্ষণাৎ মুখ ফিরিয়ে তোমার দিকে দেখছে। এ ব্যাঙ, চিতা, ভল্লুক সবারই সম্বন্ধে এই এক কথাই খাটে। তবে খরাজ শ্বাপদ জাতির মত অতটা চতুর নয়। এ ছাড়া শ্বাপদের আর একটি বিশেষ সুবিধা, সে অতি সামান্য আড়ালের কিম্বা প্রস্তর খণ্ডের পিছনে আত্মগােপন কতে পারে। তুমি তােমার বন্দুক ব্যবহারে নাই ক্ষিপ্র হওনা কেন, হঠাৎ