ঝিলে জঙ্গলে শিকার। জেনেছি শিকার-শিবিরে অবস্থিতি কালে প্রতিদিন প্রভাতে ঈষৎ পরিমাণে কুইনী সেবন ককূলে এ কষ্টের হাত সহজেই এড়ান যায়। যা সে সব কথা পরে হবে। এখন আমি বাঘের কথা বলি। এই চমৎকার কথা শেষ করে, তবে অন্য আর সব প্রাণীর কাহিনী তােম.দের বলব। বাঘ যেখানে কোন জীব হত্যা করে রেখে যায় সেই খানে তার প্রতীক্ষায় বসে থাকা, তার সাক্ষাৎলাভের সব চেয়ে ভাল উপায়। স্থান বিশেষে এ ভিন্ন আর কোন উপায়ই নেই। তবু নৈরাশ্যের কারণ ঘটাও আশ্চৰ্য্য নয়। সে সম্বন্ধে দু’ একটি উপদেশ শুনে রাখা ভাল। জীববরি লােভ দেখিয়ে বাঘকে ঘঁদে ফেলা শক্ত কাজ নয়। স্থানীয় লােক, যারা হয়ত শিকারের কায়দা কানুন কিছুই জানে না, কিন্তু জন্তুটি যে জায়গায় বাধলে বাঘ এসে দেখা দেবে সে কথা তারা ঠিক বলতে পারে। বাদই বাঁধ আর মহিষই বাধ তাতে বড় একটা আসে যায় না। তবে মহিষ বঁধতে হলে বাচ্ছই ভাল। বান দড় গলায় দেৰে, কি ছাদন দড়ি পায়ে দেবে, তাতেও বড় কিছু প্রভেদ হয় না। তবে দিনের প্রথম দিকে কাজটা করা ভাল। বাঘের মত জোয়ান জানোয়ারেও ছিড়তে পারে না এমন শক্ত দড়ি দিয়ে বাঁধাটা কিছু নয়। প্রথমে সে জন্তুটির উপর ঝাপ দিয়ে পড়ে, তাকে মারে, তার পর তাকে কিছু দূর টেনে নিয়ে মেতে ভালবাসে। যদি শক্ত বানের জন্যে টেনে নিয়ে যেতে না পারে তাহলে সে এক খণ্ড মাংসও খায় না। আর এমন হতে পারে য়ৈ আর সেখানে সে ফিরে আসে না। অল্পদিন আগেকার কথা, একটা বাঘ এম্নি দড়ি ছিড়তে না পেরে বলদের মাথাটা একেবারে কামড়ে ছিড়ে ফেলে তার পর তার ধড়টা টেনে নিয়ে । গিয়েছিল। বাঘের মত সন্দিগ্ধস্বভাবের জন্তু অর দুটি নেই। সে সব জিনিষকে আর সমস্ত জীবকেই সন্দেহ করে। মৃত কি জীবিত সে সম্বন্ধে নিৰ্বিচার। এই খানেই তার বিচার শক্তির দুর্বলতা। আমি তােমায় আইন ব্যবসায়ী হতে পরামর্শ দেব না ; বিশেষতঃ জজ হতে কখনই বলব না। কেন না তাদের সব দোষের মধ্যে এই নির্বিচার বুদ্ধিই সব চেয়ে প্রবল। সকলের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি—বলা উচিত ছিল সব গুণের মধ্যে এই নিৰ্বিচার গুণই সমধিক শক্তিমান। শাস্ত্রানুশাসনের ছন্দানুবর্তন না করে আমি। কোন কথা কইনে। তাই এখানে অধ্যায় এবং শ্লোক দুই উদ্ধৃত করছি। লর্ড ম্যাকনাটন কি বলেন একবার শােন।-“রাজ সামন্তগণ (Lords) কলিকাতায় উচ্চ ধর্মাধিকরণের বিচার গ্রাহ করিতে অসমর্থ। পণ্ডিত বিচারকগণ সমস্ত ব্যাপার সকল ব্যক্তি সম্বন্ধেই, কি জীবিত কি মৃত, সন্দেহ প্রকাশ করিয়াছেন ! যে কেহ এই কাৰ্য্য সংস্রবে বুদ্ধিমানের মত ব্যবহার করিয়াছে সে জীবিত কিম্বা মুতই হােক বিচারকগণ তাহাদের প্রত্যেককে এবং সকলকেই সাধারণ ভাবে নির্বিচারে সংশয় দৃষ্টিতে দেখিয়াছেন।” I, L, R. Calcutta Series, Pages 684•• 693. উদ্ধত অংশের আর ভাগ্যের প্রয়োজন আছে কি? ব্যাঘ্রের বিচারশক্তি সম্বন্ধে অবিকল এই কথাই বলা চলে। উপঢৌকনস্বরূপ যে জীবন্ত জন্তুটি তাকে উপহার দেওয়া হয় তার বন্ধনবিধি কিম্বা তার | আকার অবয়বের যৎ সামান্য বৈক্ষণ্য যদি থাকে, তবেই সে সনি-চিত্ত হয়ে উঠে। মৃত জুটিকে। যদি ঈষৎ স্থানান্তরিত কর তাহলেও সে সংশয়ব্যাকুল হৃদয়ে পলায়ন করে। তুমি যতই কষ্ট ভােগ করে, গাছের আগলে পথ চেয়ে বসে থাক না তার দেখা আর পাবে না। দিন দুপহুরে মাঝে,
পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/৪৭
অবয়ব