৩২ ঝিলে জঙ্গলে শিকার মাঝে সে মৃতজীবের পাচর শৃগাল শকুনির পাল তড়িয়ে দেবার জন্যে এসে দেখা দেয়। যদি সে পূৰ্ব সংস্থানের অকারণ সামান্য ব্যতিক্রমও দেখে তাহলে সেই যে চলে যায় আর প্রায় ফিরে আসে না। | সাধারণতঃ মৃত জন্তুটিকে সে কিছু দূর টেনে নিয়ে যায়। কখন কখন গৃধিনী শকুনির কবল হতে রক্ষা করবার জন্যে বহুদূরেও নিয়ে রাখে। মাচানে উঠবার সময় যদি বােঝ রাতের ছায়ায় কিম্বা চাদের আলােতে মৃত জন্তুটি ভাল করে দেখবার অসুবিধা হবে, তাহলে যেখান হতে দেখা সুবিধাজনক দু’চার হাত দূরে তেমন জায়গায় একটু সরিয়ে নিয়ে গেলে কোন ক্ষতি নেই। তবে সাবধান, যেমুন ভাবে ছিল অবিকল সেই ভাবেই রেখাে। তার কিছু বদল কোর না। এই একই সুবিধার জন্যে যদি পার নিঃশব্দে আড়াল-করা দু একটি ডালপালা ও সম্মুখ থেকে ভেঙ্গে দিতে পার। যারা তােমার মাচানে যাবার পথে সঙ্গী হবে তারা যেন একেবারে বােবা হয়ে থাকে ; অন্তত একশ হাতের মধ্যে কেউ যেন এ নিয়ম ভঙ্গ করে না। চাদনী রাতেও বনে জঙ্গলে আলো ছায়ার এমন লুকোচুরি খেলা চলে যে এই যেখানে আলো ছিল পলক ফেলতে না দেতে সেখানে অন্ধকার ঘিরে আসে। মুহূর্ত পূর্বে যা কিছু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল সমস্ত অদৃশ্য হয়ে যায়—-রাত্রি তার নিবিড় নীলাঞ্চল দিয়ে সহসা সব টাকা দিয়ে ফেলেন। সচরাচর বাঘটিকে ফঁদে ফেলার জন্যে বনের এদিক ওদিকে দু’চাটি জন্তু বাধা হয়। আর অধিকাংশ সময়ই একাধিক মারা পড়ে। যদি তােমার সঙ্গে বন্দুকধারী দ্বিতীয় সঙ্গী না থাকে তাহলে এর মধ্যে একটিকে রেখে, অন্য মৃত জন্তুটি সরিয়ে ফেলে তার ৩ান জীবন্ত আর একটি বেঁধে জীবিত বাকী সব গুলিকে স্থানান্তরিত করূবে। নূতনটি মারা পড়ে নিশ্চয়ই পরদিন তােমার শিকারের সুবিধা করে দেবে। বেশী দিনের কথা নয়, ভ্রমবশত আমি একবার একটী প্রকাণ্ড ব্যাম্ববীরকে হাত করবার সুযোেগ হারিয়েছিলাম। আমাদের শিবিরের অনতিদূরে একটা জন্তু বাঘে মেরে রেখে গিয়েছিল। আমি পায়ে হেঁটে তার খোঁজে যাব স্থির করি, কিন্তু আর সকলের সম্পূর্ণ ভিন্ন মত হওয়ায় আমি আর আমার এক বন্ধু বেলা সাতটার সময় হাতে চড়ে খুনীর তল্লাসে বেরুলাম। বেশী দুর আমরা যাই নি। পাহাড়ের জঙ্গলে এ অবস্থায় যে পরিমাণ শব্দ হয়, তাই শুনে সে যে কোথায় পলায়ন দিলে আর তার টিকিও দেখা গেল না। সে যে তখনই মৎস জেন সমাধ! করে গিয়েছে তার নিদর্শন সব ছিল। যে পথে দ্রুত পলায়ন করেছে সেখানে? বৃহৎ পদচিহ্ন সুস্পষ্ট। বেলা ন'টার সময় কতকগুলি লােক সঙ্গে করে আমি মাচান বাঁধাতে গিয়েছিলাম। একটু আগেই বাঘের কোন খোঁজ পাওয়া গেল না দেখে বন্দুকটী সঙ্গে নিই নি। জঙ্গলে যেতে এমন ভুল আমার আর কখনও হয় নি। যারা আমার সঙ্গে ছিল তাদের একটু দূরে রেখে, আমি মৃত জন্তুটির দিকে এগিয়ে গেলাম। বলা বাহুল্য এ অবস্থায় যতটা সতর্ক হওয়া অত্যাবশ্যক, আমি তার কিছুই করি নি। শুধু বাঘ যে পথে এসেছিল আমি তার বিপরীত পথে যাওয়া ভিন্ন আর কোনরূপে সাবধান হই নি। সেখান হতে গজ ত্রিশেক দুরে আমি চুপি চুপি বাশঝাড়, খাট গাছ ও পাথরের আড়ালে আড়ালে যখন যাচ্ছিলাম তখন মনে হল , কি যেন একটা নড়ল। তার পরে সম্মুখে একেবারে খের গুছে দানব প্রমাণ একটা বাঘ দেখতে পেলাম। সেই মুহূর্তেই আহার সমাধা করেছে। এর বিশ হাত পুথ পাহাড়ের গা বেয়ে সে উপরে উঠে গেল। তখন বন্দুক হাতে থাকলে লক্ষ্য যে অর্থ হত, নিঃসমেহ। যত সতর্কতা ও
পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/৪৮
অবয়ব