পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৪ ঝিলে জঙ্গলে শিকার ১৫ফিট ঊর্জে মাচান বাঁধবে, এই হচ্ছে বিধান। কেউ আপন আপন ফুচি এবং পদগৌরব অনুপাতে উন্নততর স্থানে মাচান বেধে থাকেন। আমি কিন্তু ততটা উন্নতির পক্ষপাতী নই—১২ ফিটই আমার যথেষ্ট মনে হয়। আর চিরন্তন প্রথামত মাচানের সম্মুখে ডালপালার পর্দা আটা আমি ভালবাসিনে। দূরে হতে এমনতর মাচান একটি অন্ধকার সন্দেহজনক স্থান বলে বােব হয়, দেখতেও ভাল হয় না। মনে হয় চাষার ক্ষেত পাহারা দেবার কুঁড়ে, শুধু চালখানি উড়ে গেছে। মাচানের সম্মুখে দু’একটি। ডাল বুদ্ধি করে সাজিয়ে দিতে পারলেই কাজ চলে, অপর পক্ষের সতর্ক দৃষ্টি এড়ান যায়। এইটাই হচ্ছে আসল কথা। মাটিতে দাড়িয়ে নয়ত মাচানে বসেই শিকার কর, অপর পক্ষের নজর না পড়ে। সেইটি কতে পারলেই হ’ল। এই সে দিন আমার একজন বন্ধু এই কারণেই ভাল্লুকের পাল্লায় পড়েছিলেন। গুলি করে উৎসাহের মুখে ভুলে গিয়ে নীচু মাচানের উপর নড়াচড়া কতেই ভাল্লুক টের পেয়ে খাড়া হয়ে চীৎকার করূতে করতে তাঁর কাছে এসে পড়ে পায়ের জুতাের উপরে থাবা মারে। এই সুযােগে বন্ধুবর Paradox বন্দুকের নল একেবারে ঋক্ষের কপালের উপর রেখে তার ইহলােকের সব হিসাব নিকাশ করে দেন ! যদি নদী কি খালবিলের কাছে মাচান বাঁধ তবে, জেন ব্যাভ্র খুব সম্ভব গােধূলি লগ্নে নয়ত প্রহরেক রাত্রির মধ্যে এসে দেখা দেবে। এর চেয়ে অধিকক্ষণ তার প্রতীক্ষায় বসে থাকা যুক্তিসঙ্গত নয়। রেডিয়ম্ আলোক সম্প্রতি ব্যবহার হচ্ছে। পূর্বের অনেক উজ্জ্বল আলােকের চেয়ে এটা ভাল। আর যার যা ইচ্ছে হয় তাই ব্যবহার করূতে পারেন, তুমি রেডিয়ম্ আলােতেই সন্তুষ্ট থেকো। | যে রকম বহুকই ব্যবহার কর, আগে হতে যদি এ আলাে তাতে গান না থাকে অব অবিলম্বে একটি লাগিয়ে নেওয়া ভাল। অবশ্য বন্দুক তৈরির সময় লাগালেই ভাল হয়। তাহলে ফরমাস দেবার সময় তােমার আবশ্যক মত নিখুত করিয়ে সব করে নিতে পার। | চিঠি শেষ করবার আগে একটা কথা তােমাকে বলে রাখি। অনেক সময় এমনও দেখা যায়, বাঘকে প্রলোভন দেখাবার জন্যে যে জন্তুটি বেঁধে দেবে তাকে মার দুরের কথা, হয়ত সে সেদিকে দৃকপাতও করে না। তার পাশ দিয়ে চলে যাবে তবুও স্পর্শও করবে না। উপরি উপরি দুরাত একটি বাঘ এমি একটি জন্তুর পাশ দিয়ে জল খেতে গিয়েছে, তাকে কিছুই বলে নি। দুরাত প্রতীক্ষার পর তৃতীয় রাত্রিতে বাঁধা বলদটির ভয় ও অস্থিরতা দেখে-বুঝলেন বাঘটি পাশ দিয়ে খাতির নদারত ভাবে যাচ্ছে। তখন তার গুলিতে সে মারা পড়ল। . ১লা ডিসেম্বর ১৯১৭। মেহের অলকা কল্যাণ, আমাদের দেশের বসতবাটী হতে করাত দিয়ে কাঠকাটার শব্দের মত বাঘের আওয়াজ অনেক বার তােমরা শুনেছ। আর যতদিন বাঘটি আমার গুলিতে মারা না পড়েছে তত দিন এ শব্দের বিরাম হয় নি। যখন আমার মৃগয়া চেষ্টা ফিল হয়েছে তখন বহু বার তােমর বহু ব্যারাজের মৃতদেহ সমারােহে আঙ্গিনায় আনীত হতে দেখেছ। তার মৃত্যু বৃত্তান্ত বারম্বার শুনেও তােমাদের সে কাহিনীতে অরুচি হয় নি।