ঝিলে জঙ্গলে শিকার। ৩৫ চিত্ৰক ব্যা বড় বিচিত্র জন্তু। অন্যান্য হিংস্র জন্তু অপেক্ষা চিত্রকের হত্যা ব্যাপারেই নানারূপ দৈব দুর্বিপাকে পড়তে হয়। গ্রামের চারি দিকে এরা আড়ি পেতে থাকে। তােমার পােয্যপুত্রের মত আদরের কুকুরটির ললাভে সহসা শিবিরে এসে হাজির হয়। বহু মেষ, ছাগ, গােবৎস এবং গ্রাম্য শূকরশি নজর আদায় করে ! মস্ত মস্ত গাই বলদও এদের হাতে অব্যাহতি পায় না। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে প্রতি রাত্রেই ভিন্ন ভিন্ন চিতা এসে বনের মধ্যে বেঁধে দেওয়া বলদ মেরে রেগে আপন আপন গৃহাশয়ে প্রত্যাগত হয়ে দিব্যি নিরাপদে বসবাস করেছিল। খােলা মাঠে ও গ্রামে কোথাও এই জন্তুর নাগাল পাওয়া সহজ নয়। বেত বনে সুবিধা বুঝে এরা বেশ পালিয়ে বেড়ায়। লম্বা ঘাসে ঢাকা মাঠে “হাতী পর হাওদা” আবার তার উপর স্বয়ং আরােহী হয়ে এদের শিকার করতে হয়। অনেক শিকারী মনে করেন Ritle এর চেয়ে S. s. G. গুলি দিলে এদের ওষুধ ধরে ভাল। হাওদার উপর নিরাপদে বসে এ ব্যবস্থায় সুবিধা হলেও আমি এটার পরামর্শ দিই না। এদের মধ্যে কারাে কারো আয়তন ৮ ফুটেরও অধিক হয়। যারা এদের সঙ্গে বেশী কারবার। করেন নি তারাই এদের খাট করেন, হতশ্রদ্ধা করেন, কিন্তু আসলে এরা অশ্রদ্ধার পাত্র নয়। মানুষের সঙ্গে এদের পরিচয় বেশী বলেই এরা তাদের দেখে ভয় খায় না। এরা বাঘের চেয়ে সহজে আক্রমণ কবে। তাই দ্বাঘের ধরণ ধারণ মেজাজ মতবের খোঁজ খবর রাখা যদি শিকারীর পক্ষে অবশ্যক হয়। তা হলে এই চতুর নির্ভীক জন্তুটির অভিসন্ধি দুরভিসন্ধি, অভিরুচি অনভিরুচি সম্বন্ধে আরাে অধিক সতর্কতা অত্যাবশ্যক। কিছু না করতেই সে গায়ে পড়ে লড়াই করতে আসে। গুলি লাগবার আগে বাঘ কখনও তােমার উপর চর্চাও করে না। চিতার সম্বন্ধে এ কথা বলা চলে না। তবে এমনও অনেক সময় দেখা যায় বটে চিতা ও বাঘ উভয়েই নিত্যন্ত ভীরুর মত ব্যবহার করছে। চিতা বেশী চটপটে। খুব অল্প সময় ও জায়গার মধ্যে ঘুরতে ফিরতে পারে। সাপের মত নিঃশব্দ গতিবিধি, নূত পথ ধরতে ভারি মজবুত, আর অতি অল্প আঙুলের সুবিধা পেলেই এমনি গা ঢাকা দিয়ে থাকে বে তাকে সহজে খুজে বার করা ভারি মুস্কিল। মেয়ে চিত পুরুষের চেয়ে আকারে ছোট হলেও বুদ্ধিতে বঃ আর বেশী ভাল শিকারী। বাচ্চা হবার কিছু দিন আগে হতেই সে স্বামীর কাছ থেকে দূরে থাকে, আর এই দুৰ্ব্বত্তের হাত হতে নিজের সন্তানকে রক্ষা করবার জন্যে নানাবিধ উপায় উদ্ভাবন করে। অধিক সাহসের সহিত আক্রমণ করে, নিরাপদ আশ্রয়স্থান সহজে ছাড়ে না। গতিবিধির সম্বন্ধে বিশেষ সতর্ক, কোন আড়াল অন্তরালের সুবিধা পেলেই সত্বর পলায়ন করে। বনের চারি দিকে সন্ধানের জন্য যখন সােরগােল শুরু হয় তখন সৰ্ব্বদাই দেখি স্বামীটা সঙ্গে থাকলেও সেই আগে বার হয়ে আসে, অর পুৰু-ব্যাঘও ভয়ে ভয়ে পীর পদাঙ্ক অনুসরণ করে। পুনরাবন্তী হতে তাকে কখনও দেখি নি। বিশেষ বৃহদায়তন আর পূর্ণবয়স্ক না হলে আমি প্রায় চিত্রনীদের হত্যা করি না। শাবক সম্বন্ধে, কি ছেলে কি মেয়ে, এই নিয়মই পালন করে থাকি। তবে ঘন বনের মধ্যে যেখানে এদের গুদার পােষাকটী ছাড়া দুর হতে বড় একটা কিছু দেখা যায় না সেখানে স্ত্রী পুরুষের প্রভেদ বােঝা কঠিন। শাবক সংহতি হতেই স্ত্রী কি পুরুষ সহজেই জানা যায়। এদের রক্ষা করবার জন্য আমি অনেক সময় শিকারই বন্ধ করেছি। চিত্রনীর গ্রীবাদেশটা চিত্রকের চেয়ে দীর্ঘ। চোখ যদি বেশ খুলে দেখ, ভয় যদি না পাও তাহলে আরো অনেক প্রভেদ অনায়াসেই দেখতে পাবে; কেন না প্রভেদ অনেক আছে।
পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/৫৩
অবয়ব