পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঝিলে জঙ্গলে শিকার ৪ঠা ডিসেম্বর ১৯১৭ খৃঃ। মেহের অলকা কল্যাণ, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ছেলেমানষী ছাড়তে হয়। বুড়ো না হলেও বয়স আমার হয়েছে। সেটা বেকবুল যাবার যাে নেই। সারাক্ষণই জাহাজ, জুতাে, শীলমােহর, বাঁধাকপি আর রাজরাজড়ার গল্প করা পোষায় না। সেই জন্যে আমার প্রিয় প্রসঙ্গের উত্থাপন করতেই হয়। চিঠির আরম্ভেই আমার জানিত দুটি অসাধারণ ঘটনার কথা বলব। সকলেই জান বােধ হয় বরাহ ব্যাঘ্র ভয়ে ভীত হয় না। বীরের মত হেলায় প্রাণ বিসর্জন করতে এখন আর কোন জন্তুকে দেখা যায় না। গুলি খেয়ে বাথ যদি একদম বেহুস হয়ে না পড়ে, তাহলে তােমার বন্দুকের সাড়া পেয়ে সে গর্জে উঠে, জলুক আঘাত পেলে কাতরে কাতরে কঁাদে, চীৎকার করে। শুধু বরাহবীর বন্দুকের গুলি, বল্লমের খোঁচা সব উপেক্ষা করে খাড়া থাকে,—টলেন, বলেনা, চলেনা। বরাহ, ব্যাজ, চিত্ৰক কখন বনে একত্র বাস করে না। এক বনে থাকলেও ভিন্ন ভিন্ন অংশে গিয়া আস্তানা নেয়। তাই এক চিত্ৰক যে কেমন করে বরাহের সঙ্গে দ্বন্দ্ব যুদ্ধে প্রবৃত্ত হয়েছিল, সে এক অদ্ভুত ব্যাপার! একজন চাবা রাত্রে ক্ষেত্রে পাহারা দেবার সময় এই যুদ্ধ স্বচক্ষে দেখে। যুগ্ধ ব্যাপার ভােরের দিকেই ঘটে। তার কাছেই আমরা সংবাদ পেলাম। জায়গাটিতে উপস্থিত হয়ে যুদ্ধ বে হয়েছিল, তার নিভুল নিদর্শন চারি দিকে দেখতে পেলাম। রক্তের ছড়াছড়ি আর শূকরের ক্ষুরের মত পায়ের গভীর চিহ্ন। আর একটি স্থানে বাঘের পায়ের আঁচড়ের দাগও দেখলাম। রক্তও সেখানে কিছু বেশী জনেছিল। খোঁজ করে তাদের খোঁয়াড়ে পেঁছিতে আমাদের কিছু সময় লেগেছিল। বাবটি বেশী দূরে যেতে পারে নি। তার চলা ফেরা হাত পা নাড়া দেখেই স্পষ্ট বােঝা গেল, যুদ্ধে সেই পৃষ্ঠ ভঙ্গ দিয়ে পলায়ন করেছে, অবস্থাও সঙ্কট। আমাদের সােরগালে যখন বেরিয়ে এল দেখলাম লড়াইয়ে হেরে, পলাতক কুকুরের মত একেবারে কঁাচু মাচু গােলামী চেহারা ! সহজেই বন্দুকের মুখে আত্ম সমর্পণ করলে। একে শেষ করে শূয়ােরের খোঁজে গেলাম, তাকেও মারলাম। পরীক্ষা করে দেখলাম, বাঘের গারে শারের দাগ বেশী। গলার। কাছে আর পাঁজরের চামড়া অনেক খানি ছেড়া। মাংসের মধ্যে গভীর ক্ষতও ছিল। দিব্য বলবান শরীর, দৈর্বে প্রায় ৭ফুট। শূকরী কঁাধের কাছে উচুতে প্রায় ২৬ ইঞ্চি। সেইখানে দুই একটা সামান্য অাঁচড়ের দাগ, আর মাথার উপর দুএকটা এর চেয়ে গভীর ক্ষত চিহ্ন চোখে পড়েছিল। মাটীতে মাথা ঘষে এই ক্ষত গুলিতে সে কাদার প্রলেপ লাগিয়ে নিয়েছিল। চেহারায় মনে হল বাঘের সঙ্গে লড়াই করে সে কিছুমাত্র কাবু হয় নি। আমরা তার দিকে আসছি বুঝে আড়াল হতে সে এমি দ্রুত সম্মুখে এসে পড়ল যে আমার ভয় হয়েছিল বুঝি গুলি ফসকে যাবে। বাটীকে মারবার যা ' কিছু গৌরব সেটা তারই। তবে বিজয় বৈজয়ন্তী বাঘছাল খানি আমারই লভ্য হল। | চরের উপরের জমি ঘাস আর শরবনে ভরা। দেখেই মনে হয় বাঘ থাকবার উপমুক্ত স্থান। দুদিন ধরে আমি ও R বন বাদাড় ল ঠিয়ে বেড়াচ্ছি তবু যে ব্যাঘ্ৰদম্পতির আগমন সংবাদ পেয়ে অামরা এখানে এসেছিলাম তাদের কোন সন্ধান পাওয়া গেল না। তাবুতে ফিরবার পথে একটা মস্ত মরা গরুর উপর হুচট খেয়ে পড়লাম। দেখে বােঝা গেল এ হত্যাকাণ্ড বাঘের কীর্তি। আবার সম্ভব জায়গা গুলিতে খোঁজ আরম্ভ হল কিন্তু লাভ কিছুই হল না ; বাৰ পূৰ্বের মতই নিরুদ্দেশ। তখন ২ বল্লেন মর। গ যেখানে আছে সেইখানটাতে হত্যা দিয়ে থাকা যাক দেখি কি হন ! উঁদনি রাত, " ,