পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঝিলে জঙ্গলে শিকার। ভুক্তাবশিষ্ট উচ্ছিষ্ট এক মৃত গােবৎপের সন্নিধানে উপস্থিত হলাম। ভূরি ভােজনের চিহ্ন চারি দিকে দুষ্ট হল। চিতাটী আয়তনে বৃহৎ হলেও তার শরীর খানি কসরৎ করা পাঠানের মত,একেবারে বাহুল্য মাংসবসাবর্জিত, কৃশ-মধ্য, সুঠাম, সুন্দর! কদিন ধরে আমার শিকারীদের বনে বনে দৌড় করিয়ে হয়রান করে নিয়ে বেড়াতে লাগল। যখনই ধরি ধরি মনে হয়, তখনই খবর আসে আর এক জঙ্গলে পালিয়ে গেছে। একবার ত খােলা মাঠের উপর দিয়ে পার হয়ে চলে গেল। সে পথে তার পায়ের দাগ আর খুঁজে পাওয়া গেলনা। সন্ধান করে নাগাল পাওয়া বড় কঠিন হয়ে দাড়াল। অনেক দূর পথ ঘুরে ঘুরে তবে কোন চিহ্ন দেখা যায়। বনের মধ্যে শিকারের সন্ধানে শিকারী যখন ফেরে তখন মনে হয় মিছামিছি ঘুরে বেড়াচ্ছে, মানুষটার বুঝি বা মাথার কিছু গােল আছে। কিন্তু এ সম্বন্ধে যাদের জ্ঞান ও পারদর্শিতা আছে তারাই জানে এ সব আনাগোনা, চলা ফেরা অনর্থক কিছুই নয়। ধাধার মত মনে হলেও এই গতিবিধির সার্থকতা আছে। যে সব শিকারীরা এই C. 1. D.'র কাজ করে তারা জানে, কোথায় পায়ের দাগের জন্য খোঁজ করতে হয়। হেঁড়াপাতা, ছড়ান ঘাস, আর নেতিয়ে পড়া লতার অর্থ কি ? আমরা ভােরে এই চেষ্টায় বেরিয়েছিলাম। বেলা দুটো পৰ্যন্ত সঠিক খবর পাওয়া যায়নি। তার পর কতগুলি মরাপাতার নড়াচড়া, ছােট একটা ধরাশায়ী কচিগাছ, তারই পাশে বনের গলির মুখে ব্যাপদাঙ্কের ভগ্নাংশ তার সন্ধান আমাদের বলে দিলে। | ঘাস জঙ্গল ছাড়া এ সব জন্তু সহজে পথ করে সােজা যেতে পারে না। কিন্তু যে পথে বাধা অল্প সেই দিকে আপনা হতে গলি পথ গড়ে ওঠে। এর এই অকা বাঁকা গোলক ধাঁধার মত পথে চুকিয়ে লুকিয়ে আসা যাওয়া করে। কেবল যখন আঘাত পেয়ে ব্যথায় জ্ঞানশূন্য হয় তখনই হঠাৎ খােলা জায়গায় এসে পড়তে দেখা যায়। এ সব পথ আবার আবিষ্কার করা সহজ নয়। অবস্থার পরিবর্তনে বর্ষায় গাছ কিম্বা জমি খসে পড়ার জন্যে অনেক সময় এরা পুরাণ পথ ছেড়ে নূন পথে যাতায়াত আরম্ভ করে। যা হউক এখন আমার গল্পটা আবার শুরু করি। শিকারীরা ঝােপটার চারি দিক বেশ মননযােগের সহিত দেখে বুঝলে বেরিয়ে আসবার পথ সব গুলিই ভাল। তাড়া পেলে কোন্ পথে আসবে সেটা আন্দাজ করাও শক্ত নয়। সেই বুঝে তারা তাড়া দেবে ঠিক করুলৈ। আর সকলেই আপন আপন জায়গা পছন্দ করে নিয়ে সেই খানে নিঃশব্দে পাহারায় দাড়াল। আমরা দুক্রোশ পথ ঘরে ঘরে অভীষ্ট স্থানে পৌঁছেছিলাম। তাই যাতে কোনরূপ নিরাশার কারণ না ঘটে সে দিকে বিশেষ ব্যবস্থা করা হল। চারি দিকে কাছাকাছি গুটিকত বড় বড় গাছ। কাঁটায় ভরা ঘন বেতসলতা কুঞ্জের কোন অভাব ছিল না। আমি এমনি একটা গাছের পিছনে দাঁড়িয়ে ছিলাম সেখান হতে পালাবার পথে সব গুলি গলির মুখই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। তাড়না শুরু করতে না করতে চিত্ৰক বাহিরে এল; এসে আমার মানুষ গন্ধ পেলে, না আমার বন্দুকের নলটা দেখতে পেলে ঠিক বলতে পারি না, কিন্তু একে বারে বাইরে না এসে গাছের আড়ালে দাঁড়াল। আমি যেখানে ছিলাম সেখান হতে তার ঠোটের একটু খানি, গোঁপের ওঠানামা, আর লাঙ্গুলের ঘন ঘােমাবলী দেখতে পাচ্ছিলাম। কয়েক মুহূর্ত মাত্র সে এই ভাবে দাঁড়িয়ে ছিল। আড়াল হতে বাইরে আসা মাত্র তাকে মারব বলে আমিও একী মনে প্রতীক্ষা করে রইলাম। বিদ্যুৎবেগে আমার দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ল। আমিও পাশ কাটিয়ে কোণাকুণি নাগাল পাবার জন্য তার দিকে দৌড় দিলাম। যদিও খুব কাছে গিয়েছিলাম, বস্তুতঃ একটু বেশী রকম