বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঝিলে জঙ্গলে শিকার। কাছেই পেছিলাম, তৰু অমির গুঞ্জি তার গায়ে না লেগে উপর দিয়ে চলে গেল। পালাবার সময় হঠৎ সে একবার মাটীতে ঘঁটু গেড়ে বসেছিল। এতই কাছে ছিল যে বন্দুকের নল দিয়ে তাকে আমি চুতে পারতাম। পালাতে পালাতে অকস্মাৎ সে যে কেমন করে স্থির হয়ে দাঁড়াল। আমাকে আক্রমণ না করে, তার বংশগত ক্ষিপ্রতার সাহায্যে পিছিয়ে সাপের মত কুঙুলি পাকিয়ে গাছের আড়ালে গিয়ে পড়ে, অন্তত সেবার মূত অদৃশ্য হয়ে গেল! এ অদ্ভুত ব্যাপার আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না। আমার শিকারীদের মধ্যে সব চেয়ে যে মজবুত, বিপিন, মস্ত এক বল্লম হাতে করে আমারই পাশে দাড়িয়ে ছিল। সে ত আমারদুঃসাহস দেখে ভীত হয়ে উঠল, কিন্তু তাই বলে ফেলে পালায় নি। সঙ্গে সঙ্গে থেকে বাঘ যে পথে গিয়েছিল সে পথে আমায় নিয়ে চলল। বনের অলি গলি তার খুব পরিচিত। আমি আবার কিছুই জানতাম না। অন্য শিকারীদের ডাক দিয়ে আনবার জন্য যেই সে একটু দূরে গেছে অমনি আমি বুঝতে পারলাম বেতবােপের মধ্যে কি যেন নড়ে উঠল। তার পর বাঘের ঘাড়ের কতক অংশ দেখে বুঝলাম সে ক্রমশঃ এগিয়ে আসছে। আমি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। সে ফুট কয়েক আসবা মাত্রই গুলি করবার জন্য বন্দুক উঠালাম। এই ঈষৎ যে শব্দ হয়েছিল তাতে সে। সতর্ক হয়ে মুখ তুলে চাইলে। সেই সুযােগে আমি তার গলায় গুলি করলাম। সেইখানেই সে ইহ লীলা সম্বরণ করলে। | এই বাঘটী যুদ্ধ কিম্বা সাহসের কোন পরিচয় দেয় নাই, বরং তার ভয়ত্ৰস্ত সঙ্কুচিত ব্যবহার দেখে আমি একটু অাশ্চর্যই হয়ে গিয়ে ছলাম। গ্রাসাচ্ছাদনের অভাব যে তার ছিল না, তাও নয়। আহারের চেষ্টায় অনেক দূর পর্যন্ত তাকে ঘুরে বেড়াতে হয়েছিল। আমি যে ভাবে তার পিছু ধরে ছিলাম তাতে আমার স্থির বুদ্ধির পরিচয় পাওয়া যায় না। সেই বন হতে তার পালাবার কোন উপায় ছিল না। আবার একবার শিকারীদের একত্র বরে অনুসন্ধানে বার হলেই ঠিক হত। কিন্তু প্রতীক্ষা করে আমি ভারি শ্রান্ত হয়ে পড়েছিলাম। আর জানইত “উদ্যোগনং পুরুষসিংহমুপৈতি লক্ষ্মী”। লক্ষ্মী নয়, ব্যাঘ্র পেলেই সে দিনের মত মনস্কামনা পূর্ণ হয়। কাজেই আর চুপচাপ বসে থাকতে পারি নি। জীবনেই বল আর শিকারেই বল যে শুধু নন্দলালের মত “বাচিয়া রহিল কোন মতে, তার ভাগ্যে কিছুই লাভ ঘটে না। | এ বাঘটী তাড়া খেয়েও যেমন টু শব্দ করে নি তেমনি আর একটী বাঘ অকারণে আশী হাত দুর হতে আমায় ভাড়া করে এসেছিল। আমি তার চল ফিরার পথে কোন বাধা দিই নি। তাকে আমি আক্রমণ করতে পারি এমন ভাবও ব্যক্ত করি নি। তবু সে গায়ে পড়ে, যেন “রাস্তা নিকিয়ে, আমার সঙ্গে কোন্দল বাধিয়ে ছিল। সে ইতিপূর্বে নদীর ধারে খড়ের বনে যেখানে লুকিয়ে ছিল তার মাথার উপর ছাড়া চারি দিকে ঘন বেতবনে ঘেরা। শিকারীরা আবার যখন নুতন করে বন পিটিয়ে তাকে বার করবার চেষ্টায় হিল, তখন সে ঘাসের বন যেখানে হাল্কা হয়ে আছে সেই খানে আত্মগােপন প্রয়াসে, বােকার মত প্রথম আপন মাথা প্রবেশ করিয়ে দিয়ে, মনে করেছিল আর কেউ তাকে - দেখতে পাচ্ছে না। বিপু। শরীরখা। যে দখা যাচ্ছে একবারও ভাবে নি। স্থির হয়ে দাড়ান তার ভাগ্যে লেখে নি। শিকারীদের তাড়ায় কে এগিয়ে চলতেই হল। আবার সেই কাদায় ভরা নদী পার হয়ে বনের পথে দেখা দিলেনীচেই আর একটী বন ছিল। আমি এক জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিলাম