পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৪ ঝিলে জঙ্গলে শিকার স। সেইটাই সব চেয়ে সঙ্কট স্থান। এ অবস্থায় এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করাই বুদ্ধিমানের কাজ। বিশেষ যদি হিংস্র জন্তুর সহিত সম্মুখ যুদ্ধে তােমার সাহসে না কুলায় তা হলে আসন্ন বিপদের সম্মুখীন হওয়ার চেয়ে পৃষ্ঠভঙ্গ দেওয়াই যুক্তিযুক্ত। এমন সঙ্কট স্কুলে ও সময়ে বাঘ দুই কাজ কতে পারে, হয় পাশ কাটিয়ে চলে যায়, নয়ত অনধিকার প্রবেশের জন্য তােমায় শাস্তি দিতে ছুটে সম্মুখে এসে দাঁড়ায়। দৌড়ে যদি না দাঁড়ায় তাহলে অধিকাংশ সময় তােমায় বন্দুক তুলতে দেখেই থমকে দাঁড়ায়। আর সে এই অব্যবস্থিত অবস্থায় থাকতে থাকতেই তার উপর গুলি করা উচিত। এ রকম মুখােমুখি বােঝা পড়া করার প্রধান অসুবিধা হচ্ছে, বুকে গুলি লংগলেও সেটা সব সময় মারাত্মক হয় । আর যে অাতে ঘা দিলে সে নির্ঘাত মরে, পেট ফুড়ে সে গুলি মারা বড় সহজ কথা নয়। অনেকটা অবশ্য, দৈব, ভাগ্য বা ভগবৎ-কৃপা যাই বল, তার উপর নির্ভর করে। অনেক সময় দেখা যায় গুলি তােমার কপাল ঘেষে গেল তােমার কিছুই হলনা, কিন্তু তােমার পিছনের লােকটি মারা পড়ল। দুর্ঘটনার হাত এড়িয়ে, কোন বিপদে না পড়ে যদি গােটা ত্রিশেক বাঘ শিকার কর, তা হলে ভবিষ্যতে এ সম্বন্ধে কতকটা নিশ্চিন্ত হতে পার। এ সব অবস্থায় অপরের কাছ হতে কোন সাহায্যের ভরসা রেখ না ; সর্বদাই নিজের উপর সম্পূর্ণ নির্ভর কোরাে। | বাঘ আক্রমণ করূতে এসে কত সামান্য কারণে পশ্চাৎপদ হয় সে কথা শুনলে আশ্চর্য্য হবে। একবার আমি ও মােBodhisattwa-bot (আলাপ) দাদা একত্রে একই বাঘের উপরে গুলি করেছিলাম। সেটা গড়িয়ে আমারে বাঁ দিকের জঙ্গলে প্রবেশ করূলে। প্রত্যক্ষ সাক্ষীও অনেক সময় অভ্রান্ত হয় না। এখানেও তাই ছিল। আমরা মনে করেছিলাম সে বুঝি মারা পড়েছে, কিন্তু তা নয়। আমাদের গুলি তার সম্মুখের জমি চষে গিয়েছিল, তার শরীরে কোথাও আঘাত লাগে নি। শুধু বারুদের ধোয়া আর বন্দুকের শবে অন্ধ ও বধির হয়ে সে এমন অদ্ভুত আচরণ করেছিল। সব রকম ঘটনার ব্যবস্থা আগে হতে স্থির করা যায় না। কিন্তু চিতাবাঘ যখন খুব কাছে এসে পড়ে তখন তাকে অবসর দিয়ে নিজেই আক্রমণ করা ভাল। এগিয়ে এসে ঝুকে পড়ে গুলি করলে অনেক সময় তার আক্রমণের হাত এড়ান সহজ হয়। বাঘ যখন আক্রমণ করে তখন সম্মুখের কোনরূপ ব্যবধান তার মনােমত হয় না। তাই তােমার আর তার মধ্যে যদি কোন গাছ কি মৃত্তিকা স্তুপের বাধা থাকে, তা হলে কাছে হলেও তাকে দুররর্তী মনে করতে পার। স্থান নির্বাচনের উপর তােমার কৃতকাৰ্য্যতা অনেকটা নির্ভর করে। তার অজ্ঞাতসারেই লক্ষ্য নির্দেশ করা বিশেষ কৰ্ত্তব্য। তিন বৎসরের মধ্যে আমি আঠারটা চিতা শিকার করেছিলাম, আর এই সময়ের মধ্যে আমি বিশেষ লক্ষ্য করে দেখেছি পনেরটি আমাকে একেবারে দেখতেই পায় নি। নিজে অগ্রসর হয়ে আক্রমণ করার সম্বন্ধে আমি তােমায় একটা উদাহরণ দেখাব। ব্যাপারটা আমাদের দেশের বাড়ীর কাছেই ঘটেছিল। একটা ঝাপের দুধার দিয়ে দুটি রাস্তা গিয়েছে। আক্রমণ করতে হলে চিতা এরই কোন একটা ধরতে পারত। আমি একটা বাঁশঝাড়ের কাছে মুখ লুকিয়ে বসেছিলাম। কোন অঘটন হতে পারে এমন সংশয়ের লেশমাত্র মনে উদয় হয় নি। আমি যেখানে বসেছিলাম তার কিছু নীচে একটা গভীর দুঙ্করিণী। তারই ধারে আর একটা রাস্তাও ছিল। তার পাড় খাড়া উচু। সেখানে পা রাখবার একটু জায়গা ছিল না। আর পা ফালাই জলে পড়ে হাবুডুবু খাওয়া ছাড়া উপায় নেই। আমার শিকারীয়া ও আমি এই রাস্তাটকে গণ্য করা আবশ্যক মনে করি নি। আর তাদের গভীর পরামর্শ