ঝিলে জলে শিকার। . ৪৫ ৪৫ ৭ অনুসারে আমি টুলটা একেবারে ধারে নিয়ে পেতেছিলাম। নুয়ে পড়া বাঁশের উপর বন্দুকটী রেখে তা করার সুবিধা হবে বলে বাঘটাকে ঘেরাও করে আনবার সঙ্কেত দেওয়া হল। “মােহনলাল” মাতঙ্গ বেতন পায়ে দলিয়ে পুকুরের ধারে ধারে এগােতে লাগল। শিকারীরাও তার অনুসরণ করলে। জমিটা নীচু ছিল। বেশী নিরাপদ নয় বলে শিকারীরা সম্মুখে এল না। আমি সম্মুখে ঝুকে পড়ে কোথায় কি শব্দ হয় কি নড়ে দেখবার শােনবার জন্য সতর্ক হয়েছিলাম। এমন সময় আমার কিছু নীচে কি যেন একটা ঈষৎ নড়ে উঠল মনে হল। ফিরে দেখি পাড়ের দেয়াল বেয়ে একটা মস্ত চিতা আমার গজ খানেক নীচে হতে উঠে আসছে। আমি বন্দুক ঘুরিয়ে নিতেই সে আমায় দেখতে পেয়ে পালাল। ঢালু পাড়ের আড়াল থাকায় তাকে তখন আর দেখতে পেলাম না। যত নিঃশব্দে পারি আকার ইঙ্গিতে ব্যাপারটা মাহুতকে বুঝিয়ে দিলাম। তারা চারি দিক হতে বাঘটাকে কাছে ঘিরে ধরল। আমিও টুল ফিরিয়ে বন্দুকটা এমন ভাবে ধরে রইলাম যে উপরে নীচে যে দিকে দরকার সে দিকেই গুলি করূতে পারি। বন্দুকের কুঁদো এমন নীচে রেখেছিলাম যে ঘােড়াজোড়া আমার হাঁটুর উপরে ছিল। বাঘটা আমায় আগেই দেখেছিল, তাই মনে করেছিলাম আমি যেখানে আছি সে পথে আর অসূবে না। তবুও আমি সব আট ঘাট বেঁধে ঠিক হয়েছিলাম। যতক্ষণ সম্ভব সে গা ঢাকা দিয়ে রইল। তার পর চোখের পলক ফেলতে না ফেলতে দেখি যে এক রাশ কটাসে হলদে লােমের গাদা সম্মুখে এসে পড়েছে। বাঘের মাথাটা প্রায় বন্দুকের কুঁদোয় এসে ঠেকেছে। তখন তাকে আক্রমণ করা ছাড়া গত্যন্তর ছিল না। বন্দুকের কুঁদোর চোটের চেয়ে আমার “যুদ্ধং দেহি” ভাবে সে বেশী আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিল। নিঃশব্দে গুলিটী খেয়ে ব্যাস্রাসুর ঝপাৎ করে জলে পড়ে গেল। আমি সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে এলাম। এই খানেই বাঘের ব্যবহার আর স্থান নির্বাচন সম্বন্ধে আমার হিসাবের বাহাদুরী। একজনকে বাড়িয়ে অপরজনকে খাট করে তুলনা দিয়ে কথা বলাটা ভদ্রতা নয়, তবু শাল দম্পতি সম্বন্ধে বলা চলে যে মহিলাটী এগিয়ে এসে কড়াই বানাতে মজবুত। দুর্ভাগ্যবশতঃ আমার অভিজ্ঞতা এইরূপই বলে। ইনি শিকারীও খুব হুসিয়ার। যে আগুন বাঘিনীর চোখে জলে তা দ্বিগুণ ও নির্মমতর। ১৯শে ডিসেম্বর ১৯৯৭। স্নেহের অলকা কল্যাণ ! মােহনলালের কথা বলতে গিয়ে তার সম্বন্ধে বেশ একটা গল্প মনে পড়ে গেল। তাতে তার বুদ্ধির বেশ একটু পরিচয় পাওয়া যায়। আমি যতগুলি কঁাতাল হাতী দেখেছি তার মধ্যে মােহনলালের মেজাজ ভাল। শিকারক্ষেত্রে সে বেশ সতর্ক। সারা দিনের শেষে যখন আমরা মৃগয়ায় জয়ী হয়ে বাড়ী ফিরতাম তখন গজেন্দ্র ধরণে তার পারিতােষিক মিষ্টান্ন ও ইক্ষুদণ্ডের কথা আমাকে স্মরণ করিয়ে দিতে কখন ভুত না। তাকে আদর করতে গেলে সে ঘড়ায় জল ভরবার মত শব্দ করে মনের আনন্দ প্রকাশ করত, তার পর চলে আসবার সময় কোটের খুট ধরে টান দিয়ে জানাত শুধু সােহগে পেট ভরে না, মিষ্টান্ন আবশ্যক। ঘন বেতন, দুই ধার ঢালু হয়ে নালায় নেমেছে। যারা জঙ্গল পিটিয়ে এগিয়ে আসছিল তাদের। পক্ষে এই ঋথে চুলা শুধু দুরূহ নয়, বিপজ্জনক বিশেষতঃ নালার ধারে। “কুনকী” (হস্তিনী) এক
পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/৬৯
অবয়ব