বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪৮ বিলে জঙ্গলে শিকার r পার, তাহলে বন পিটিবার সঙ্কেত শব্দ শুমাত্র তারা দ্বিগুণ বেগে পলায়ন করে। যেখানে জন্তুটিকে মারে সেখান হতে অনেক দূরে গিয়ে আত্মরক্ষার জন্ঠে আশ্রয় নেয়। আর এই উপায়ে অনুসন্ধান-কাদের চোখে ধূলাে দিয়ে চলে যায়। বাঘটা মস্ত বড় ছিল। আমরা তার নাম দিয়েছিলাম “De wet” । আমাদের গ্রামেই হত্যাকাণ্ড সুরু করে,বলতে গেলে আমাদের নাকের উপরে এ দুরূহ কাজ করে, আমাদের সে অমান্ত করেছিল। সারা দিন ধরে সম্ভব অসম্ভব সশস্ত আস্তানা খুজেও তার কোন কিনারা করতো না। যদিও প্রতিবারেই মনে হচ্ছিল শেষের চেয়ে এবারের জায়গাটি বেশী আশাজনক তবুও প্রতিবারই নিরাশ হতে হয়েছিল। • এমন দিন যেত না, যে দিনে সে হয় আমাদের কাছাকাছি, নয়ত মাইল কত দূরে কোন একটা খুন খারাপি না কত। আমাদের অনেক সুযােগ বয়ে যেতে লাগল। আমরা সবাই একমত হয়েছিলাম যে সে যেমন কদিন ধরে আমাদের হয়রান করে নিয়ে বেড়াচ্ছে, যেন তেন প্রকারেণ তাকে পাকড়াও করতেই হবে। আমরা চলে আসবার দিনে আমি তার নাগাল পেলাম। গাঁয়েরই একটা জঙ্গলে সে ধরা পড়ল : রাখালের গরুর পাল নিয়ে ভোরে যান মাঠে যাচ্ছিল তখন তার গর্জন শুনতে পেয়েছিল। স্বতন্ত্র একটা গ্রামে হত্যাকাণ্ড সমাকরে খোলা মাঠের উপর দিয়ে আধ ক্রোশ একটা চর পেরিয়ে শেষ রাতের অস্পষ্ট অন্ধকারে সে এসে গ্রামের বনের মধ্যে আশ্রয় নিয়েছিল। অধিকৃত বনটির অখণ্ড রাজত্ব একলাই ভােগ করবে বলে বুনাে শূয়রদের তাড়াবার জন্যে সে তর্জন গর্জন আরম্ভ করেছিল। তাই শুনে নিরীহ ধেনুগগাষ্ঠী ভয়ে পলায়ন করে। বােবর বালাই নেই, এই উপদেশ মেনে সে যদি মুখ বুজে থাকত, তাহলে আর আমরা তার সন্ধান পেতাম না। যে খােলা মাঠের উপর দিয়ে এসেছিল সেটি একেবারে শুনাে খটখটে। কোথাও এতটুকু পায়ের দাগ পড়ে নি। তাকে খুজে বের করার উপায় হত না। প্রশস্ত ঝিলের ধারে জঙ্গলে সে আশ্রয় নিয়েছিল। সে জায়গাটি একটু উচু। উত্তরে দক্ষিণে ঘন বেতন। ঝিলের ধারে চওড়া একটি ঘাট। সেখানে গরুরা জল খেত। এইখানেই তার পায়ের দাগ আমরা দেখতে পাই। বেতের কতকগুলি লতা একেবারে জলের উপর ঝুকে ‘ড়েছিল। সে তাই শুক্নাে ডাঙ্গা ছেড়ে জলের ধারে ধারেই বনে প্রবেশ করেছিল। আমি একটা তেঁতুল গাছের নীচে গিয়ে দাঁড়ালাম। জায়গাটি চারি দিকেই খােলা। তাই তেমন নিরাপদ ছিল না। এর চেয়ে ভালাে জায়গাও আর ছিল না। তাই তেঁতুলগাছের গুড়ির সম্মুখে একটা পাতায় ভরা ভাল রেখে একটু আড়াল করে নিলাম। শুধু বন্দুকের নিশানা আর আমার দৃষ্টির বাধাজনক পাতা ও ছোট ছোট ডালগুলি ভেঙ্গে ফেললাম। দুটি হাতী ঝিলের ধারে ধারে এগােচ্ছিল। আর বন যারা পিটোয় তারা পূর্ব পশ্চিমে চলেছিল। হাতীর ভীষণ হুঙ্কারে আমরা সব প্রথমে তার সান্নিধ্য বুঝতে পারলাম। কিন্তু খােল। গােচারণের মাঠে এসে দাঁড়াতে তার আরও কিছুক্ষণ সময় কেটে গেল। অমর হতে সদরে আসবার জন্য তার কোন তাড়া ছিল না। এধার হতে ওধারে যাবার জন্য কোন ঔৎসুক্য বােঝা যায় নি। সে আসলে যত শনি উ চু তাকে তার চেয়ে বেশী দেখাচ্ছিল। সূর্যের আলােকে তার গায়ের অঙ্গরাখা কিংখাবের সােণার মত ঝলমল করছিল। গল্পীর ধীরালোলিত-গতি প্রতি পদক্ষেপে তার শার্দুল জীবনের পুর্ণ যৌবন আর পরিপুর্ণ সৰ্বাঙ্গ সৌন্দর্য প্রকাশ হয়েছিল। তার এই নধর কমনীয় অথচ রাজো'চিত মহিমান্বিত মূর্তি আমাকে এমনি মুগ্ধ করেছিল যে আমি গুলি ছুড়তে কয়েক মুহূর্ত বিলম্ব । । ।