ঝিলে জঙ্গলে শিকার। ৪৯ করে ফেলেছিলাম। লক্ষ্য স্থির করতে এ বিলম্ব হয় নি। কাধের নীচে এক গুলির আঘাতই সে পড়ে গেল। তবু সাংঘাতিক আর একটি স্থানে আবার একবার গুলি করলাম। এটা কাছাকাছি ছিলাম যে দ্বিতীয় গুলি অবশ্যকর্তব্য জেনেই করেছিলাম। অনভিজ্ঞ লােকে মনে করতে পারে এটা নিতান্ত অপব্যয়। | বড় জানােয়ার শিকার করবার বিশেষ আনন্দগুলাে নিতান্ত উপরি পাওনা-ফাউ-কপাল জোরে জুটে যায়। সে গুলি যেন শিকারীর টুপীর বাহার কতগুলি বাড়তি পালক। এ পালক কিন্তু আমার এক গােছ জমেছে। অনেক ক্ষেত্রে বিবিধ উপায়ে পাওয়া, স্বীকার করা ভাল। অনেক বার এ সব সময়ে আমার লক্ষ্য-নৈপুণ্য প্রভৃতির বহু প্রশংসাবাদ পূরাদস্তুর অতি মাত্রায় গ্রহণ করেছি; কিছুমাত্র বিচলিত হই নি। একটা ঘটনা এখানে বলা যেতে পারে। একটা বাঘ ভােয়ের কিছু পূর্বে একটা মন্ত গরু মেরে রেখে চলে যায় ; অথচ আপন গতিবিধির কোন নিদর্শনই রেখে, যায় নাই। শিকার করে রেখে গিয়েছিল বটে কিন্তু একটী গ্রাসও উদরস্থ করেনি। তাই রাতের বেল তার ফিরে আসার বিশেষ সম্ভাবনা ছিল। যে সব লােকেরা শিকারের সন্ধান নিয়ে আসে তারা এ বাঘ যে কোথায় বাসা করেছে তার সন্ধান বলতে পারলে না। তাই আমরা মনে করলাম যে দিনটায় অন্তঃ বন আর একবার ওলটপালট করায় ক্ষতি নাই ! ভাের না হবার আগেই তারা যাত্রা করেছিল, আর সন্ধ্যা যখন ঘাের করে আসছে নির্দিষ্ট স্থানে তাদের সঙ্গে দেখা হ’বামাত্র তাদের আকার ইঙ্গিতে কৃতকাৰ্য্যতার লক্ষণ সুস্পষ্ট বােঝা গেল। যেখানে মরা গরুটি পড়েছিল সেখান হতে ক্রমে তারা হত্যাকারীর আশ্রয় স্থানটী আবিষ্কার করেছিল। যখন খেতে যান তখন ব্যাবীর ১০ হাত চওড়া নালা এক লম্ফে পার হয়ে গিয়েছিলেন! ক্ষুধা নিবৃত্তি করে ওজনেতে ভারী হয়ে ফিরবার সময় এমন ক্ষিপ্রগমন সুবিধাজনক না হওয়াতে সাঁতরে নালা পায় হয়েছিলেন। জলটা তখনও ঘোলা হয়েছিল। জল যে তখন পরিষ্কার হয় নি, কাদা গােলা ছিল তাতে স্পষ্টই বােঝা গেল যে বাঘটি অল্পক্ষণ আগেই পার হয়ে গিয়েছে। আমার বাম দিকে, বলতে গেলে ঠিক আমার পিছনেই, নিরাপদে গাছের ডালে একটি লােক বসেছিল। বাঘ যদি সে পথে আসে তবে তাকে থামাবার ভার এ লােকটির উপর ছিল। জঙ্গল যারা পিট তারা ক্রমশঃ এগিয়ে আসছে, কিন্তু বাঘের কোন সন্ধান নেই। ছােট্ট ছােট্ট পাখী, খােলা জায়গায় উড়ে বেড়াতে যাৱা ডরায়, আমার পাশ দিয়ে উড়ে চলে গেল। আমাকে খাতিরেই আনলে না। দু একটা ঘােট ঘােট ডালে এসে বসল। ডালগুলি দুলতেই লাগল। সেই ক্ষীণ শব্দে মনে হতে লাগল বাঘ বুঝি আসছে,কিন্তু ক্রমে আসল কারণ জানা গেল। আমি ক্রমে হতাশ হয়ে পড়ছিলাম। জঙ্গল পিটন প্রায় শেষ হয়ে এল, অথচ আমার পিছনে যে লােকটি বাঘকে বাধা দেবে বলে অপেক্ষা করছিল তার কোন সাড়াই নেই। ভ-বিল একটি ছােট পাখী আমার পেছন দিয়ে সাঁ সাঁ করে উড়ে গেল। আমি যেমনই ফিরে বলাম অমনই হাত খানেক দূরে এক নজর উজ্জ্বল গুলবসান একটা পােষাকের একটু খানি দেখতে পেয় বন্দুক ঘুরিয়ে নিয়ে আমি গুলি করলাম। কি যে হ’ল তা বুঝবার কোন উপায় ছিল না। সম্মুখের জল এমনি ঘন যে তার মধ্যে দৃষ্টি চলে না। গুলির ফলাফল অনুমান ৰুগকি পারলাম না। গুলির শব্দে, যারা বন পিটিয়ে এগিয়ে আসছিল, তারা থেমে গেল। আমিও ঝোপের মধ্য হতে [ {