৫২ । বিলে জললে শিকার। H আনতে পারুলে তখন অসন্তোষজনক বিপদের সম্মুখীন হওয়া অপেক্ষা পশ্চাৎপদ হওয়াই সমীচীন বিবেচনা করেছিল। দার্শনিক Hobson এর মত এ ক্ষেত্রে আমারও কাজের দুটি পথ ছিল,-হয় করা নয় ছাড়া। শেষ পথ আমার মনে নেয়নি। আমি অতি সাবধানে নিঃশব্দে আমার টুলটি খুলে বিছিয়ে বসে বিপিনকে অন্য শিকারীদের ডাকতে পাঠালাম। তারা অদুরেই প্রতীক্ষা করেছিল। পাছে সতর্ক শিকারটি পালিয়ে যায় এই ভয়ে এতক্ষণ অগ্রসর হয় নি। কাছে একটাও বড় রকম ঝােপ ঝাড় ছিল না যার আড়ালে আত্মগােপন কর্তে পারি। যে বেতবনে বাঘটি আশ্রয় নিয়েছিল তার আর আমার মধ্যে খুব খাটো গুটিকত গুল্মের ব্যবধান। একটু দূরে একটা বাঁশঝাড় ছিল, কিন্তু সেখানে এগােতে গেলে হয় ৰাঘকে নেকট্য সম্বন্ধে সংবাদ দিতে হয়, নয়ত তাকে হঠাৎ আক্রমণের সুবিধা দেওয়া হয়। কাজেই আমার ঠাই-নাড়া হবার উপায় ছিল না। যেখানে আমি বসেছিলাম তার তিন দিকে খােল মাঠ। যদি প্রথম গুলিতেই শিকার না মারা পড়ে তাহলে তার পলায়ন পথটা পাহারা দিয়ে থাকা নিজের পক্ষে কত বিপদজনক তা বুঝতে বিশেষ আয়াস করতে হয় নি। যদিও এ সব সময়ে হাটমাথায় রাখাই আমার অভ্যাস তবুও সেটা বড় নজরে পড়ছে বুঝে খুলে ফেলতে হল। হাট মাথায় রাখবার বিশেষ সুবিধা আছে। আমি স্বচক্ষে তার সাক্ষ্য পেয়েছিলাম বলেই এ কাজ করতাম। একবার মাথায় টোকাধারী একজন কৃষকের উপর বাঘ এসে পড়েছিল। চাষা বেচারী শিকার করবার মতলবে আসে নি, দেখবে বলেই এসেছিল। বাঘ এসে থাবা মারতেই সে ত মাটীতে পড়ে গেল। তার পর বাঘেমানুষে এম্নি জড়াপুটুলি পাকিয়ে গেল গুলি মারলে কার গায়ে যে গিয়ে লাগবে বুঝতে না পেরে মন স্থির করবার আগেই দেখি বাথ পালিয়ে গেছে। কৃষকের কাছে গিয়ে দেখি তার গায়ে একটি অচিড়ও লাগে নি। মাথা ঢাকা টোকাটি তুড়ে গেছে বটে কিন্তু মাথায় কিছু হয় নি। হাটবিহীন অবস্থায় বসে রইলাম বটে, কিন্তু এমন নিরাবরণ অবস্থা সুখের মনে হচ্ছিল না। বন-পিটোন যাদের কাজ তারা নিঃশব্দে এগিয়ে আছিল, কিন্তু দুচার পা যেতে না যেতেই ঘাসের মধ্যে খুব একটা খসখস শব্দ শুনতে পেয়ে মনে করলাম বুঝি মস্ত একটা শুয়াের আসছে। আমার ভুল হয়েছিল। দেখলাম বাঘটা তীরবেগে বেরিয়ে এসেছে। আমার গুলিটা ভাল করে লাগল না লাগল বুঝবার আগে বাশঝাড়ের পাশে এসে পড়ে গেল। আবার মুহূর্তের মধ্যে উঠে ভয়ানক গর্জন করে আমায় আক্রমণ করলে। যেন তার কিছুই হয় নি। আমি তখনও বুঝতে পারি নি এখনও বলতে পারিনে বন্দুকের অন্য নলটা তার উপর খালি করেছিলাম কি না। কেন না সমস্ত ঘটনাটা মুহূর্তকালের মধ্যে ঘটে ছিল। কিন্তু যা আমার খুব স্পষ্ট মনে আছে তা হচ্ছে এই। বাঘটা ডিগবাজী খেয়ে আমার মাথা ডিঙিয়ে অন্য ধারে গিয়ে ধপ করে পড়ে গেল। যাবার সময় তার গায়ের বাতাসের ঝাপটা আমার মুখের উপরে এসে লাগল। আমার দিকে মাথা করে সে চিৎ হয়ে পড়ে গিয়েছিল। যদিও বুঝতে পারলাম সে একেবারে মারা পড়েছে তবুও সাবধানের বিনাশ নেই জেনে আমি বন্দুকটা আবার ভরে নিয়ে তার কাছে এগােলাম। কেন যে আমার উপরে এসে না পড়ে অন্য দিকে গিয়ে পড়ল বােঝা কঠিন। তবে বােধ হয় বুকে যে তার গুলি , ছিল তাতেই সে মারা পড়ে। কিন্তু মরবার পরও অনেক সময় দেখা যায় পিঠদাড়ার বিপরীত গতিতে মৃত শরীর অনেক সময় উল্টো দিকে গিয়ে পড়ে। এখানেও তাই ঘটেছিল। সে যে লাফিয়ে পড়েছিল সেটা সেচ্ছাকৃত নয়, দহযন্ত্রের ধনুষ্টারের মত কোন অভাবনীয় ব্যাপার। সব বন
পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/৭৬
অবয়ব