বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঝিলে জঙ্গলে শিকার। . ৫৫ হাতের স্পর্শ একেবারেই লোভনীয় নয়। বিপক্ষের মুখের উপরই আক্রোশ অধিক। আক্রমণ কতে হলে সেখানেই করে, ও চিরস্থায়ী চিহ্ন খােদিত রেখে যায়। যে অবস্থায় বাঘ কিম্বা চিতা রেহাই দিয়ে যায়, যদি তুমি তার মাথায় আঘাত করতে না পার, তাহলে সে অবস্থায় সে একেবারে ঘাড়ে এসে পড়ে, পেড়ে ফেলে। তখন সমূহ বিপদ ঘটবারই সম্ভাবনা। যে ভাবে ভাল্লুক খাড়া হয়ে পাড়ায় তার বুকের উপরকার ঘােড়ার খুরের আকারের সাদা নােম দিয়ে ঢাকা জায়গাটীতে সহজেই গুলি করা যায়। এমন পােষমানা জন্তু সে নয়, সেটা মনে রাখাই ভাল। ভাল্লুক শূয়ােরের মতই, তার নাকটি সম্বন্ধে ভারী সজাগ। কোন রকমে সেখানে আঘাত লাগলে তারা সহজে ফিরে তােমায় আক্রমণ ও আঘাত করে। ভালুক আক বড় ভালবাস। যে সব চাষার আকের ক্ষেত একটু নির্জন জায়গায় সেখানে এদের ক্ষেত-ছাড়া করা বড় শক্ত কাজ। পৌষের এক ভাের বেলায়, অন্ধকার তখনও রয়েছে। একজন কৃষকের ডাকে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। এই গরীব বহুকাল ধরে অত্যাচার সহ্য করে আছে। রাতের পর রাত জেগে পাহারা দিয়েছে। কুঁড়ের মধ্যে কত হাক ডাক করেছে। কোন ফল হয় নি। ঋক্ষ তার বিলাপ প্রলাপ আক্রোশ কিছুতেই কর্ণপাত করে নি। আমি যেখানে তবু ফেলে ছিলাম ক্ষেতখানা তার খুব কাছেই, ঢিল ছুড়ে নাগাল পাওয়া যায়। আমি যখন গেলাম। স্পষ্ট শুনতে পেলাম ভালুকটী মনের আননে সশব্দে ইক্ষুদণ্ডের রসমাধুৰ্য্য উপভােগ করছে। জনক লােক সত্ত্বর একত্র হয়ে তাকে তাড়িয়ে বার করলে, কিন্তু সে বােধ হয় আমার মননগত অভিপ্রায় বুঝতে পেরেছিল। কেন না আমি যেখানে ছিলাম সেদিকে না এসে পাশ কাটিয়ে অদুর একটা পাহাড়ের দিকে দৌড় দিল। এই চর জীবটি আর একবার আমায় ভাঁড়িয়ে অন্য এক পাহাড়ের দিকে পালিয়েছিল। কিন্তু সেখান হতে লম্ফ দিয়ে যখন নেমে এল তখন ঘাড়ে একটা গুলি খেয়ে নিঃশব্দে নালার মধ্যে গড়িয়ে পড়ল। চামড়া ছাড়াবার জন্যে যখন তাকে চেরা হল তখন দেখা গেল আকণ্ঠ আকে পূর্ণ। আহার সম্বন্ধে এরা বড় শুদ্ধাচারী। বেশীর ভাগ ফলমূল খেয়েই জীবন ধারণ করে। বল্মীক খুড়ে তুলে উই খেতে খুব ভালবাসে। ভ্রাণশক্তির প্রভাবে দুরে হতেই মৌচাকের অস্তিত্ব জানতে পারে। তার পর তার সব মধুটুকু নিঃশেষে পান করে। এ সম্বন্ধে কিছু মাত্র দয়ামায়া দেখায় না। ফলে কঠিন শাস্তিও ভােগ করতে হয়। একবার খবর পেলাম একটী ভাল্লুক গাছে চড়ে চাকভেঙ্গে মধু খাচ্ছে, কিন্তু সেখানে উপস্থিত হয়ে আমি তার দেখা পেলাম না। দেখলাম পাশে একটা নালায় পড়ে গড়াগড়ি দিয়ে কাতরাচ্ছে আর নিজের শরীর হতে নখ দিয়ে আঁচড়ে অচিড়ে মৌমাছি সন্ধান করছে। মারা পড়বার পর দেখা গেল চুরি করতে যাবার আগে মৌমাছির কামড় হতে অল্পক্ষা করবার জঞ্জে কাদায় গড়াগড়ি দিয়ে সর্বাঙ্গে মাটির বর্ম ধারণ করেছিল। আমি যতদুর জানি ভালুকেরা স্বভাৰত মাংসাশী নয়। নিতান্ত দায়ে পড়ে মাংস ভক্ষণ করে। তবে শুনেছি দার্জিলিং অঞ্চলে প্রতি বৎসরই অনেক গরুবাহুর এদের হাতে মারা পড়ে! মধ্যপ্রদেশে ভাঙারায় আমি একবার শিকার করতে গিয়ে জুটি ভালুকের যে অদ্ভুত ব্যাপার দেখেছিলাম সেটা এখানে বলা চলবে। ১৯১৬ সালে ইষ্টারের ছুটীতে আমি এখানে বনপরিদর্শক কর্মচারীর সঙ্গে তাঁবুতে ছিলাম। এক দিন ভােরে খবর এল চিতাবাঘে আমাদের বাংলার এক পােয়। পথের উপর }